মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-১ আসন। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে এ আসনটি পরিচিত হলেও পুনরুদ্ধারে বার বার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। অন্যদিকে বসে নেই জাতীয় পার্টিও। তারাও পুনরুদ্ধারের রয়েছে তৎপরতায়।
আওয়ামী লীগ, বিএনপির পাশাপাশি এ আসনে জাপা ও জামায়াতে ইসলামীর রয়েছে দলী প্রার্থী ও ভোট ব্যাংক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকলেও জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর একক মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী রয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মাঠেঘাটে তৎপরতা দেখা গেলেও এখনো নিরব রয়েছেন বিএনপিসহ অন্যান্য প্রার্থীরা। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন উৎসবে শুভেচ্ছা ব্যানারের মাধ্যমে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে জানান দিতে দেখা গেছে। নির্বাচন নিয়ে নিরব থাকলেও আবার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই বিগত দু'তিন বছর পূর্বে থেকে বন্যায় দূর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, রমজানে ইতারি ও সেহরী খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ঈদ, পূজা, নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়সহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আগাম নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন। তিনি টানা চার বারের সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। এদিকে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যশায় দৌঁড়ে রয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এস এম জাকির হোসাইন।
ওপর দিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। দলটির এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চলমান রয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে মাঠ পর্যায়ে এখনো তাদের কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। বিএনপি থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু। তিনি বিগত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নৌকার প্রার্থী মো.শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে পরাজিত হন। এবারে দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কাতার প্রবাসী শরীফুল হক সাজু। জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মহানগরী উত্তরের সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম এবং জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান আহমেদ রিয়াজ।
নৌকার ঘাঁটিখ্যাত মৌলভীবাজার-১ আসনটিতে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হচ্ছে ১৮টি চা বাগান। এমনিতেই চা শ্রমিকদের একচেটিয়া ভোট পড়ে নৌকায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের এ দূর্গে সর্বপ্রথম আঘাত আনে জাপা। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাপা মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী উক্ত আসনে বিজয়ী হন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চারদলীয় জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী হন।১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নৌকার মাঝি শাহাব উদ্দিন বিজয়ী হয়ে হারানো আসন পুনরুদ্ধার করেন। ২০০৮ সালে ২য় বার, ২০১৪ সালে তৃতীয় বার ও ২০১৮ সাথে ৪র্থ বার এ আসনে নির্বাচিত হন তিনি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো.শাহাব উদ্দিন বলেন, আমি নৌকা নিয়ে মাঠে আছি, নৌকা নিয়ে মাঠে কাজ করতেছি। আমি আশাবাদী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আবারও মনোনয়ন দিবেন। ইনশাআল্লাহ আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠেঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এস এম জাকির হোসাইন। নির্বাচনের প্রস্তুতি স্বরুপ তিনি ইতিমধ্যে জুড়ী ও বড়লেখার বিভিন্ন এলাকায় মতবিনিময়, পরিচিতি সভা ও নানা অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দিচ্ছেন। সাধারণ জনগনের কল্যাণমুখী বিভিন্ন কাজেও প্রায় তাঁকে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের দূর্যোগকালীণ সময়ে তিনি জনগনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। মাঠে সক্রিয় থাকার কারণে তরুণ এ নেতা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। এস এম জাকির হোসাইন বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন গ্রামেগঞ্জে মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আমি সব জায়গায় বলছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, এলাকার মানুষের সেবা করার সুযোগ দেন, তাহলে আমি নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবো। আমাদের আসনটি যেহেতু নৌকার ঘাঁটি, জুড়ী বড়লেখার মানুষ সবসময় নৌকায় ভোট দেয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কথা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে একজন তরুণ হিসেবে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমি আশাবাদী তিনি আমাকে মনোনয়ন দিবেন।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠু বলেন, আমাদের দল থেকে এখনো নির্বাচনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমরা এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। আমাদের নেত্রীর মুক্তি এবং সরকারের পদত্যাগ। আন্দোলন সফল হলে পরবর্তীতে নির্বাচন নিয়ে দল চিন্তা করবে।
অপরদিকে বারবার জোটের সিদ্ধান্তে ও সমোঝোতায় দলীয় প্রার্থী দিতে পারেনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা রয়েছে শক্ত অবস্থানে। দলটির হাইকমান্ড অনেক আগে থেকে প্রার্থী চুড়ান্ত করে রেখেছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন থেকে পরিকল্পিত ভাবে তাদের নেতার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও জুড়ী-বড়লেখায় জামায়াত শিবিরের দলীয় ভোটব্যাংকের পাশাপাশি অত্রাঞ্চলে রয়েছে মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিশাল একটি ভক্তের অবস্থান। অত্রাঞ্চলের জনসাধারণের কাছে সাঈদীর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা একটি স্বীকৃতি বিষয়। আর সেটাও তাদের ভোটের রাজনীতিতে প্লাস পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে। জামায়াতে নেতা মাওলানা আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি এ আসনে দলের একক প্রার্থী। দলীয় হাইকমান্ড থেকে চুড়ান্ত নির্দেশনা পেলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিবেন।
সুযোগে অপেক্ষায় রয়েছে জাতীয় পার্টি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। এরপর থেকে হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারের জাতীয় পার্টি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান আহমেদ রিয়াজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে নিশ্চত করেন। তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হলে প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করতে চাই। প্রবাসীদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করবো। তিনি নির্বাচিত হলে কুলাউড়া টু শাহবাজপুর রেললাইন, জুড়ী ও বড়লেখার যে সকল কাজ অসমাপ্ত রয়েছে গেছে তা সমাপ্ত করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh