গাজীপুরের কালীগঞ্জ এখন ফিটনেসবিহীন লেগুনার নগরীতে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র পার্কিং ও বেপরোয়াভাবে যানবাহন চলাচলের কারণে প্রতিদিনই যানজটের সম্মুখীন হচ্ছে যাত্রী ও পথচারীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালীগঞ্জ বাজার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ফিটনেসবিহীন বাস ও অবৈধ হিউম্যান হলার বা লেগুনা সার্ভিসের ছড়াছড়ি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ যাত্রী ও স্থানীয়দের। কালীগঞ্জ বাজার বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তায় ইচ্ছে মত গাড়ি পার্কিং করে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। বেশীরভাগ সময় দেখা যায় পুরো রাস্তা বন্ধ করে যাত্রী উঠা-নামা করানো হচ্ছে। প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রনে থাকায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পায় না। পুরাতন সোনালী ব্যাংক মোড় এলাকা ও কালীগঞ্জ বাজার সন্নিকটস্থ বটতলা মোড়ে সারাক্ষণ ট্রাফিকজ্যাম লেগেই থাকে। এতে করে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগীসহ সাধারণ যাত্রীরা অসহায় হয়ে পরেছে। প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা ও ভুগতে হচ্ছে যানজট নামক যন্ত্রনায়।
পরিবহন শ্রমিক তথ ও মালিকদের তথ্যানুযায়ী কালীগঞ্জ হতে টঙ্গি পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে অবৈধ ৪০/৫০ টি পুরাতন লেগুনা চলাচল করে থাকে। যাদের নেই বৈধ রুট পারমিট ও ড্রাইভারদের লাইসেন্সসহ বৈধ কোন কাগজপত্র। লেগুনার ড্রাইভারদের মধ্যে বেশীর ভাগই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাই প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় বিভিন্ন দুর্ঘটনা। লেগুনাগুলো মূলত মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ফিটনেসবিহীন মাইক্রোবাস আর পিকআপের নতুন সংস্করণ। ঝুঁকি থাকা সত্বেও মধ্যবিত্ত-নিন্মবিত্ত মানুষের কাছে লেগুনার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, লেগুনার বিকল্প কী? সাধারণের দাবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি এর কোনো বিকল্প ভেবেছেন?
কালীগঞ্জ বাজার বাসষ্ট্যান্ড হতে পুরাতন সোনালী ব্যাংক হয়ে মোড় হয়ে টঙ্গি পর্যন্ত বীর দর্পে চলে এসব লেগুনা। লেগুনার শ্রমিকদের দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, এসকল লেগুনার ওপর নির্ভর করছে অন্তত ২ শত পরিবারের প্রায় এক হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা রাজধানী ঢাকার খুবই প¦ার্শবর্তী এলাকা। গত দুই যুগেও অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থার তেমন কোন উন্নয়ন সাধিত হয়নি। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি পরিবহন ব্যবস্থা অতিতে থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই। প্রতিদিন শত শত যাত্রী ফিটনেসবিহীন যানবাহনে করে কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কে যাতায়াত করছে। একারনে বিভিন্ন সময় ঘটছেমারাত্নক সড়ক দূর্ঘটনা। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কালীগঞ্জের আড়িখোলা রেলষ্টেশনে ট্রেনের পর্যাপ্ত স্টপেজ না থাকায় সড়কে যাত্রীদের বাড়তি চাপ লক্ষ করা গেছে। সেই সুবাদে পরিবহন ব্যবসায়ীরা ফিটনেসবিহীন গাড়ী চালাচ্ছেন দেদারসে। গাড়ীর বাহ্যিক অবস্থা আরোও নাজুক। যাত্রীদের বসার আসন ছেড়া কাপড় দিয়ে বাধানো। বেশিরভাগ লেগুনার দরজা তার দিয়ে বাধা। কালীগঞ্জ হতে রাজধানীতে সরাসরি উন্নত বা আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই যাত্রীরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে এসব লেগুনায় যাতায়াত করে থাকে।
ঢাকায় নিয়মিত যাতায়াত করে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, চাকুরী করি তাই প্রতিদিন যেতে হয়। লেগুনা ছাড়া আর কোন পরিবহন নেই তাই বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজিজুর রহমান প্রতিবেদককে জানান, আমি বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি বহুদিনের পুরাতন ও জটিল সমস্যা। তবে অত্র এলাকার পরিবহন ব্যবস্থা পূর্ব হতেই অত্যন্ত নাজুক। এই সমস্যা নিরসনকল্পে পরিবহন সেক্টরের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। তবে আমি এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিব।
ফিটনেসবিহীন লেগুনার ব্যাপারে জানতে চাইলে গাজীপুর বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) মো. আবু নাঈম মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ করে শীগ্রই দ্রুত ব্যবস্থা নিব এবং প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh