× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিচারপতিকে ধোঁকা দিয়ে ৪ বার জামিন নেন ইউপি চেয়ারম্যান

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো

৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:০৪ পিএম

রংপুরের বদরগঞ্জের কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল হক মানিকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ৮ বিচারপতির সাথে প্রতারণা করে জামিন নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি হত্যা মামলার এই আসামি আত্মসমর্পণ না করেই একে একে আটজন বিচারপতিকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে হাইকোর্ট থেকে চারবার জামিন নিয়েছেন। 

শুধু তাই নয়, হাইকোর্টে সবশেষ গত ২১ জানুয়ারি জামিন পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পেরোতেই বেরিয়েও যান কারাগার থেকে। এমন স্মার্ট আসামির অভিনব প্রতারণায় হতভম্ব হয়ে গেছেন চেম্বার জজ।

জানা গেছে, বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল হক মানিক।তিনি ২০০৩ সাল থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে কালুপাড়া ইউনিয়নের দায়িত্ব পালন করছেন। 

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৮ মে দুপুরে টাকা দেওয়া-নেওয়াকে কেন্দ্র করে আব্দুল মজিদকে ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রামের বাড়ি শংকরপুর সরকার পাড়ায় তুলে নিয়ে মারধর করেন ইউপি চেয়ারম্যান মানিক, তাঁর ছেলে তমালসহ কয়েকজন। এরপর ওই দিন রাত ৮টার দিকে মজিদ চেয়ারম্যানের বাড়ির ঘাটের ওপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে দুই ব্যক্তি তাঁকে ভ্যানে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় প্রচার চালানো হয় মজিদ উপজেলা সিও রোডে হঠাৎ মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান। ওই দুই ব্যক্তি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক মজিদকে মৃত ঘোষণা করলে ওই দুই ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন। 

ঘটনার ছয় দিন পর ২ জুন মজিদের স্ত্রী বিলকিস বাদী হয়ে দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করে বদরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, মজিদের সঙ্গে সাবেক ইউপি সদস্য সাইদারের সখ্য ছিল। সাইদার নানা কৌশলে তাঁর কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই তাঁকে মেরে ফেলা হয়।

ওই মামলায় আত্নসমর্পণ না করে আসামি শহীদুল হক মানিক হাইকোর্টকে অভিনব কায়দায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে ধোঁকা দিয়েছেন চারবার।

সূত্র বলছে, মামলায় ২০২২ সালের ১১ আগস্ট হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইতে আসলে মানিক চেয়ারম্যানকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এর মেয়াদ শেষ হলে আত্মসমর্পণ না করেই ১৯ অক্টোবর তথ্য গোপন করে ফের আগাম জামিন চান আসামি শহীদুল হক মানিক। এবার অন্য বিচারপতি তাকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। কিন্তু এবারও আত্মসমর্পণ না করে পুরনো কায়দায় আরেক বিচারপতির বেঞ্চ থেকে একই আদেশ নেন তিনি।

এরই মধ্যে গত বছরের ৩১ মে আব্দুল মজিদ হত্যা মামলার চার্জশিটে ৩ নম্বর আসামি হন শহীদুল হক মানিক। ১৪ নভেম্বর ২০২৩ আত্মসমর্পণ করে যান কারাগারে তিনি। তবে এ বছরের ২১ জানুয়ারি ফের বিচারপতি কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন চান আগের সব তথ্য গোপন করে। জামিন মঞ্জুর হলে ৪৮ ঘণ্টা যেতে না যেতেই কারাগার থেকে বের হন তিনি। এর পরই শহীদুল হক মানিক চেয়ারম্যানের অভিনব প্রতারণা ও তথ্য গোপনের বিষয়টি বুঝে উঠেন বিচারকরা।  

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান শহীদুল হক মানিক একটি হত্যা মামলার আসামি। চতুর এই চেয়ারম্যান বারবার প্রতারণার কৌশল অবলম্বন করতে নিজের সব তথ্য গোপন রেখে জামিন নিয়েছেন। এসব ব্যাপারে আদালত কিছুই জানতেন না। সেই সুযোগটাই রংপুর থেকে কাজে লাগিয়েছেন আসামি শহীদুল হক মানিক। 

অবশেষে পুরো বিষয়টি নজরে আসে রাষ্ট্রপক্ষের। তার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয় চেম্বার আদালতে। সব নথি দেখে হতভম্ব হয়ে আদালত মানিককে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা প্রমাণিত হয়েছে- আদালতে প্রতারণা করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল হক মানিক। বিষয়টি এখন পরিষ্কার। তাই তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন জালিয়াতিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। বলেছেন, আত্মসমর্পণ না করলে তাকে যেন গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এদিকে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেলে এখনো চেয়ারম্যান শহীদুল হক মানিক গ্রামে ফিরে আসেননি। বুধবার দুপুরে কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে গিয়ে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে তিনি রাজধানী ঢাকাতেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। 

তার মুঠোফোন নম্বরে কথা হলে শহীদুল হক মানিক বলেন, আমি কোন প্রতারণার সাথে জড়িত না। এমনকি ওই হত্যা মামলার সাথেও নয়। আমাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। পৌর মেয়র ও পুলিশ যোগসাজোস করে আমাকে হয়রানি করতে এটা করেছে। আমি পরপর চারবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। গ্রাম্য রাজনীতিতে আমাকে নিয়ে আগের মতো এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আদালতে আমি কোন তথ্য গোপন করে জামিন নেইনি। বিচারপতিদের সাথে প্রতারণা করার প্রশ্নই উঠে না। এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাকে বিভিন্ন ভাবে হেয় করার চেষ্টা চলছে। এখন আমার জামিন বাতিল করার জন্য একটি অপচেষ্টা করছে।

অন্যদিকে বদরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ মিঞাকে ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । সম্পাদক: 01703-137775 । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.