পাবনার ঈশ্বরদীস্থ বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএসআরআই) প্রায় দুই কোটি টাকা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই গোপনে রাজস্বখাতে ৪৮ জন শ্রমিককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে বঞ্চিতদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বিএসআরআই জুড়ে ডিজি ড. ওমর আলী ও নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে চলছে কঠোর সমালোচনা। আর নিয়োগে খামার পরিচালক, খামার ইনচার্জ এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক নেতাদের অবমূল্যায়ন করায় ডিজির বিরুদ্ধে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। চলছে নানা বিষয়ে সমালোচনা। প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা কার্যক্রম। তবে শ্রমিক নিয়োগে রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ এড়াতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও নোটিশসহ কোনরুপ প্রচার করা হয়নি। তবে স্থানীয় কিছু পরিচিতজন ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের সুপারিশে তাদের স্বজনদের ও পোষ্য কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগে অবৈধভাবে কোন টাকা শ্রমিকদের নিকট থেকে গ্রহণ করেননি বলে দাবি করেন ডিজি ড. ওমর আলী।
বিএসআরআই’র থেকে পাওয়া দালিলিক তথ্যের ভিত্তিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে খোঁজ খবর নিয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শ্রমিকদের নিয়োগের কাগজপত্র ঘেঁটে ও খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, বিএসআরআই’র মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. ওমর আলী রাজস্বখাতে দৈনিক হাজিরার ৪৮ শ্রমিক নিয়োগে কোন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেননি। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডেও এ নিয়োগের বিষয়ে কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানে পুর্বে নিয়োগের নিয়ম ভেঙ্গে প্রকল্প পরিচালকদ্বয় (খামার ও গবেষণা) এবং খামার ইনচার্জকে না জানিয়ে নিজের পছন্দ অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির রোগ তত্ত্ব বিভাগীয় প্রধান ড. শামসুর রহমানকে সভাপতি, প্রশাসন বিভাগের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদকে সদস্য সচিব ও প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর বিভাগের প্রধান মো. হাসিবুর রহমানকে সদস্য করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি গত ২৪ ডিসেম্বর/২৩ সালে অতিগোপনে ওই ৪৮ জন শ্রমিককে নিয়োগ প্রদান করেন। এর মধ্যে বিএসআরআই’র প্রধান কার্যালয় ঈশ্বরদীতে ২৯ জন, গাইবান্ধা শাখায় ৯জন সুবর্ণচর শাখায় ৯ জন ও বান্দরবন শাখায় একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সুত্রগুলো মতে, এই নিয়োগে কৃষিমন্ত্রণালয় ও কৃষি সচিবের সুপারিশে ২-৩জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগে অন্যান্য শ্রমিকদেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব শ্রমিকদের প্রত্যেকের নিকট থেকে প্রার্থী বুঝে ৪ লাখ টাকা থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। নিয়োগকৃত এসব শ্রমিকদের গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ৭ দিনের বেতন সিটে স্বাক্ষর করেননি খামার পরিচালক (টিওটি) ড. ইসমাৎ আরা। এই নিয়ে বেশ ঝামেলা সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হওয়া দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ীভিত্তিতে কাজ করে আসা শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। তারা ডিজির সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদও জানান।
নিয়োগ প্রাপ্ত শ্রমিকরা জানান, আমরা তো নিয়োগের জন্য সরাসরি ডিজির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। তাই নির্ধারিত কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে চাহিদামত অর্থ দিয়ে নিয়োগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ডিজি আমাদের ডেকে বলেছেন, আমাদের নিয়োগ দিয়ে তিনি ঘুষের কোন টাকা নেননি। কিংবা আমার (ডিজি) হাতে কেউ টাকা দিয়েছো, এটা কি বলতে পারো। তাই এখন আর কিছু বলা সম্ভব হয় বলে জানান শ্রমিকরা।
এ ব্যাপারে বিএসআরআই’র খামার ইনচার্জ সঞ্জিত মন্ডল জানান, খামারে শ্রমিক নিয়োগে পূর্বে সাধারণত নিয়োগ কমিটিতে খামার, গবেষণা ও খামার ইনচার্জকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হতো। কিন্তু এবার সেটা করা হয়নি। এই নিয়োগ কমিটি তার পছন্দমত লোকদের দিয়ে করার একক ক্ষমতা রয়েছে। এতে আমার কিছু বলার নেই।
বিএসআরআই’র হিসাব কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকি জানান, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর নিয়োগকৃত ৪৮ শ্রমিকের সাত দিনের বেতন দিতে বেশ ঝামেলা পার করতে হয়েছে। নিয়োগের বিষয়টি পরিচালক (খামার) টিওটি ড. মোছাঃ ইসমাৎ আরা জানেন না দাবি করে ওই শ্রমিকদের বেতন সিটে স্বাক্ষর করেননি। পরে ডিজির একক ক্ষমতা বলে তাদের বেতন চালু করা হয়েছে।
শ্রমিক নিয়োগ কমিটির সভাপতি প্রতিষ্ঠানটির রোগ তত্ত্ব বিভাগীয় প্রধান ড. শামসুর রহমান ও সদস্য সচিব প্রশাসন বিভাগের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ জানান, ডিজির নির্দেশ ছাড়া কোন কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে নিয়োগের যথাযথ নিয়ম মেনেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগের বিষয়ে পরিচালক (খামার) টিওটি ড. মোছাঃ ইসমাৎ আরা জানান, আমি ঢাকাতে ছিলাম। নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। হঠাৎ করে ৪৮ জন শ্রমিকের বেতনের সিট এনে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছিল। আমি তাদের বিষয়ে না জেনে কিভাবে স্বাক্ষর করবো। পরে শুনলাম ডিজি একক ক্ষমতা বলে তাদের বেতন দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিএসআরআই’ মহা পরিচালক (ডিজি) ড. মো. ওমর আলী জানান, শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া ডিজির একক ক্ষমতা রয়েছে। নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে রাজনৈতিকভাবে সুপারিশ আসতো। এই কারণে ঈশ্বরদীর দলীয় লোকজন নিয়োগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হত। তাই বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে বিএসআরআই’র শ্রমিকদের মাধ্যমে ও পোষ্য কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে দাবি করেছেন ডিজি।
ডিজি আরও জানান, শ্রমিক নিয়োগে তিনি শ্রমিকদের নিকট থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করেননি। তবে যারা নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছি, তারা গোপনে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিকট থেকে টাকা নিতে পারে।
নিয়োগে কোন-কোন শ্রমিক আমাকে টাকা দিয়ে নিয়োগ নিয়েছে জানতে চেয়ে শ্রমিকদের ডেকে জিজ্ঞাসা করেছি। কিন্তু কেউ বলতে পারেনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । সম্পাদক: 01703-137775 । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh