মৌলভীবাজারে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বাবা-মা ও তিন ভাই-বোনের মৃত্যুর পর দগ্ধ শিশু সোনিয়া সুলতানাও (৮) মারা গেছে। 

বুধবার ভোরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সে মারা যায়।

সোনিয়া উত্তর গোয়ালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এ নিয়ে এক বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল ৬ সদস্যের পুরো পরিবারের।

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ২নং পূর্বজুড়ী  ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী ভাঙ্গারপার এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।

জানা যায়, মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোরে বসতঘরে উপরে স্থাপিত ১১ হাজার কেভি ভোল্টেজের বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পর্শে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, ফয়জুর রহমান (৪৩), তার স্ত্রী শিল্পি বেগম শিরি (৩৯), মেয়ে সামিয়া আক্তার (১৫ ), সাবিনা আক্তার (৯) এবং একমাত্র ছেলে সায়েম উদ্দিন (৭)। এ ঘটনায় আহত শিশু সোনিয়া আক্তার (১২) গুরুতর আহত অবস্থায় জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ঢাকায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরই সে মারা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী পূর্ব গোয়ালবাড়ী জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল মুকিত বলেন, আমাদের মসজিদে ফজরের নামাজ শেষ হওয়ার পরে বিদ্যুৎ আসে। এরপরে বিকট একটি আওয়াজ হয়। তখন বের হয়ে দেখি বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে খুঁটিতে আগুন জ্বলছে। এটা দেখে আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে প্রথমে পল্লিবিদ্যুৎ ও ফায়ারসার্ভিসকে অবগত করি। তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করলে আমরা ঘরের মানুষকে উদ্ধার করার চেষ্টা করি। কিন্তু ঘরে তাদের কোন সাড়া শব্দ পাই নি। তারপর পরে ঘরের বেড়া ভেঙে আমরা তাদের মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। এবং একজনের অবস্থা গুরুতর হলে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাই। যাদের অবহেলায় এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হয়েছে সঠিক তদন্ত করে বিচার করা হোক।

২নং পূর্বজুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রুহেল উদ্দিন বলেন, বিদ্যুতের লাইন ঘরের মাত্র ৪/৫ ফুট উপরে ছিল। গত রাতের ঝড়ে এটি ছিঁড়ে ঘরের উপর পড়ে যায়। ঘরটি টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া থাকায় সম্পূর্ণ ঘরে বিদ্যুতায়িত হয়। তখন ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও বের হতে পারে নি। ঘরের ভেতরে থাকা একই পরিবারে ৫ জনের মৃত্যু হয়। আমরা জুড়ীবাসী এতো বড় দুর্ঘটনায় শিকার ইতিপূর্বে কোনো দিন হইনি। এভাবে যাদের বাড়ির উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন চলে গেছে বড় দুর্ঘটনার হওয়ার আগে আমি সবাইকে সচেতন হওয়ার বিনীত অনুরোধ জানাই। এবং বিষয়টি প্রশাসনের মাধ্যেমে স্থানীয় সমাধান চাই।

জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাঈন উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদশর্ন করে বলেন, এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, গত রাতে বজ্রপাত হয়েছে এ কারণে বিদ্যুতিক তার ছিঁড়ে ঘরের উপরে পড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এটি মৌলভীবাজারের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। ইতিপূর্বে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। এটা নিয়ে আমরা আইনানুগ বিষয়গুলো দেখবো। পরবর্তীতে আমাদের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা সহায়তা করবো।