× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সরাইলে তিন মাসে পাঁচ খুন!

আবুল হাসনাত অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:১২ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ তিন মাসে পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু মার্চ মাসেই ২৫ দিনে তিনটি হত্যা হয়েছে। বাকি দু’টি খুন হয়েছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব হত্যাকান্ডের পেছনে পারিবারিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার, গোত্রগত দ্বন্দ্ব, ছিনতাই ও টাকা লেনদেনের ঘটনা জড়িত।

হত্যার শিকার হয়েছেন বৃদ্ধা, বৃদ্ধ, যুবক ও কিশোর। সর্বশেষ পাওনা টাকার জন্য গত শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে দুই শিশু সন্তানের জনক লাল খাঁ ওরফে সারোয়ার (২৬) নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে খুন করেছে তারই বন্ধু আল আমিন।

সরজমিন অনুসন্ধানে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা সদরের বড্ডাপাড়া এলাকার ভাড়াটে বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে অটোরিক্সা চালক আল আমিন তার বন্ধু মোটরবাইক মেকানিক সারোয়ারকে ১০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিল। সারোয়ার সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাটিহাতা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। পাওনা টাকা আদায় করতে আল আমিন (৩৩) গত শুক্রবার দিবাগত রাতে সারোয়ারকে ডেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। কথা বলার এক পর্যায়ে আল আমিন সারোয়ারকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। তবে, সরাইল থানার পুলিশ ঘটনার রাতেই এই হত্যাকান্ডের মূল হোতা আল আমিন ও জসিমকে (৩৭) গ্রেপ্তার করে। পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ সরাইল আদালতে চালান দেয়ার পর বিজ্ঞ বিচারক দুইজনকেই জেলা কারাগার হাজতে প্রেরণ করেন। এই ঘটনায় নিহত সারোয়ারের স্ত্রী নাছিমা বেগম বাদী হয়ে সরাইল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। 

এই ঘটনার মাত্র ৫ দিন আগে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের ধর্মতীর্থ এলাকায় অটোরিক্সা ছিনতাইকারী চক্রের হামলায় গুরূতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অটোরিক্সা চালক সৈয়দটুলা গ্রামের আব্বাস আলী (৫২)। ছিনতাইকারীরা তার একমাত্র সম্বল অটোরিক্সাটিও নিয়ে যায়। পরে সেখানকার পথচারীরা আব্বাস আলীকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুইদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে গত সোমবার গভীর রাতে মারা যান আব্বাস আলী। এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তার রিক্সাটি এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। 

গত ৬ মার্চ বুধবার দিবাগত রাতের যেকোন সময় পরিকল্পিত ভাবে কালিকচ্ছ ইউনিয়নের বিশুতারা গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধাকে খুন করে দূর্বৃত্তরা। এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে পরের দিন (৭ মার্চ) সকালে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় গ্রামের পাশের ফসলি মাঠের খাল থেকে ওই বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করে সরাইল থানা পুলিশ। সুরতহাল রিপোর্টে দেখা যায়, বৃদ্ধার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এতে করে পুলিশ নিশ্চিত হয় এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। স্থানীয়দের ধারণা, পূর্ব বিরোধ বা পারিবারিক বিরোধের কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে। এ ঘটনায়ও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামে মেয়ের জামাতা, শ্বশুর ও অন্যান্যদের মারধরে খুন হন ছিদ্দিক মিয়া (৫২)। ঘটনার পরই বিষয়টিকে নিস্পত্তির নামে ধামাচাপা দিতে মাঠে নেমে পড়েন স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও সালিসকারক। লাশের মূল্য নির্ধারণ করে নিস্পত্তির নামে ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টি গোটা এলাকায় চাউর হচ্ছিল। আর সালিসকারকরা তখন মুচকি হাসছিলেন। ‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না’ প্রবাদ বাক্যটির সত্যতার প্রমাণ আবার পাওয়া গেল। দীর্ঘদিন পর গত ১০ জানুয়ারি শনিবার ছিদ্দিক মিয়ার লাশের ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পায় সরাইল থানা পুলিশ। প্রতিবেদনে আঘাত জনিত কারণেই ছিদ্দিক মিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরক্ষণেই অভিযানে নেমে ছিদ্দিক মিয়া হত্যাকান্ডের অন্যতম নায়ক নিজের মেয়ের জামাতা উজ্জ্বল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে শ্রীঘরে পাঠায়। ওইদিনই উজ্জ্বলের শ্বাশুড়ি রানু বেগম বাদী হয়ে মেয়ের জামাইকে প্রধান আসামী করে সরাইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার অপর দুই আসামী ছিদ্দিক মিয়ার মেয়ে শারমিনের দেবর জুয়েল মিয়া ও শ্বশুড় আইয়ুব আলী। 

গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, উজ্জল মিয়াকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনতে আবারও লাশের মূল্য ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও সালিসকারক। তবে পুরো টাকা পায়নি ছিদ্দিক মিয়ার স্বজনরা। মাঝখানে ওই টাকা হয়েছে ভাগবাটোয়ারা। 

সেচ পাম্প চুরির অভিযোগে গত ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি একই ইউনিয়নের নোয়াগাঁও মুন্সিবাড়ির লোকজন পিটিয়ে হত্যা করেছে মধ্যপাড়ার আবেদ মিয়ার ছেলে জাহিদুল ইসলাম পরশকে (১৯)। অভিযোগ পরশের মা সুলতানা বেগমের। ১৮ জানুয়ারি পরশকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে পরশের মৃত্যু হয়। স্বজনরা তখন হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন। মৃত্যুর ২৩ ঘন্টা পর পরশের লাশের ময়না তদন্ত হয়। পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, পরশের মুখে গলায়সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। মা পরশের বয়স ১৬ বছর বললেও পুলিশ বলছে ১৯ বছর। বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে নেমে পড়েন গ্রাম্য সালিসকারকরা। অতিগোপনে তারা পরশের লাশের মূল্য নির্ধারণ করে ৬ লাখ টাকা। তবে, একটি টাকাও পায়নি পরশের পরিবার। সেই টাকা লেনদেন ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এখনো নানা কথা চাউর হচ্ছে চারিদিকে। 

এ বিষয়ে সরাইল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল বলেন, ৩ মাসে ৫ খুন খুবই উদ্বেগজনক বিষয়। খুন ও দাঙ্গা হাঙ্গামা বৃদ্ধির জন্য দূর্বল সামাজিক বিচার ব্যবস্থা ও নীতিহীন গ্রাম্য সালিসকারকরা দায়ী। এগুলো প্রতিরোধে সমাজের সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। এজন্য নাগরিক কমিটি গঠণের মাধ্যমে তৃণমূলকে সম্পৃক্ত করে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম করতে হবে। বাধাগ্রস্ত নয়, আইনি পক্রিয়াকে সঠিক ভাবে প্রয়োগের সুযোগ দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 

সরাইল থানার পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, দাঙ্গা খুন চুরি ছিনতাই অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ব রোধে ব্যাপক জন সচেতনতা প্রয়োজন। লোকজন সামান্য কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাথায় বা শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করে বসেন। ফলে, খুনের ঘটনা ঘটে যায়। অটোরিক্সা ছিনতাই চক্রের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে তাদের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সারোয়ার খুন হয়েছে। আব্বাস আলীও এমনই এক চক্রের শিকার। সচেতনতা বৃদ্ধি ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সকল ধরণের অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধ সম্ভব। ঈদে যাত্রীদের যাতায়ত নিরাপদ করতে ব্যাপক প্রচারণার ব্যবস্থা করেছি।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । সম্পাদক: 01703-137775 । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.