চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে প্রবাস ফেরত স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত সন্দেহে ক্ষুব্ধ হয়ে দুই শিশু কন্যাকে হত্যার পর স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সীমা (২৬) আত্মহত্যা করেছেন। সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ও চাঁদপুর থেকে পিবিআই ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই স্বামী আরিফ হোসেন রাঢ়ী ও স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সীমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত দুই শিশু কন্যাসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করে। পরে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে তাদের দাফনকার্য সম্পাদন করা হয়।
এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে সীমার বাবা বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ স্বামী আরিফ হোসেনকে আটক করে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করে। পরে আদালত তার জামিন নামজ্ঞুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
গত মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদু:খিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের রাঢ়ী রাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুই শিশু কন্যা হলো আরিফ (৪) ও আরিয়া (২)। ফাতেমা আক্তার সীমা পুটিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সদ্য প্রবাস ফেরত আরিফ হোসেন রাঢ়ীর স্ত্রী।
জানা গেছে, পাশের হাইমচর উপজেলার চরকৃষ্ণপুর গ্রামের মোস্তফা কোতোয়ালের চর্তুথ সন্তান ফাতেমা আক্তার সীমার সাথে প্রায় ৬ বছর পূর্বে ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদু:খিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের রাঢ়ী বাড়ির সিরাজুল ইসলাম রাঢ়ীর ছেলে আরিফ হোসেন রাঢ়ীর সাথে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুই শিশু কন্যা হলো আরিফ(৪ বছর) ও আরিয়া (২ বছর) ছিলো। দুবাই প্রবাসী আরিফ হোসেন রাঢ়ী মাস দু’য়েক পুর্বে দেশে আসে। পবিত্র ঈদ উল ফিতরের দুইদিন পর পুনরায় প্রবাসে ফিরে যাওয়ার কথা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, চরদু:খিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের আরিফ হোসেন রাঢ়ীর ঘরে স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সীমা (২৬), ৪ বছরের শিশু আরিফা, ২ বছরের শিশু আরিয়ার নিথর দেহ ঘরের খাটে পড়ে রয়েছে। বাইরে শত শত উৎসুক জনতা। উপস্থিত লোকজন এই মৃত্যু নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। এসময় স্বামী আরিফ জানায়, মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সকালে সে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দেখে তার স্ত্রী সীমা তার দুই সন্তানকে খাওয়াচ্ছে। ঘন্টা দু’য়েক পর চালের বস্তা নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। পরে ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের পিছন দিক দিয়ে জানালা গিয়ে দেখতে পাই স্ত্রী ও দুই সন্তান ঘরের ফ্যানের সাথে ঝুলে রয়েছে। পরে চিৎকার দিলে মাসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তিনজর্নে ঝুলন্ত লাশ রশি কেটে খাটের মধ্যে শুইয়ে দেই।
ওদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় লোকজন জানায়, প্রবাস ফেরত আরিফ হোসেন রাঢ়ীর সাথে তার চাচা কাতার প্রবাসী হারুনুর রশিদের স্ত্রী তাসলিমা বেগমের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এঘটনা জানাজানি হওয়ার পর আরিফের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সীমার সাথে ৮ এপ্রিল সোমবার রাতে কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই পরদিন সকালে এই ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয়দের ধারনা মা ও দুই মেয়ের এই মৃত্যু রহস্যজনক। স্বামী পরকিয়ায় আসক্ত সন্দেহে মা দুই মেয়েকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছে, নচেৎ স্বামী আরিফ হোসেন নিজেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার রহস্য বের করা উচিত।
সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতেই স্বামী আরিফ হোসেন রাঢ়ী ও স্ত্রী ফাতেমা আক্তার সীমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও মারামারির ঘটনা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একপর্যায়ে ও চাঁদপুর থেকে পিবিআইও ঘটনাস্থলে পৌছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত দুই শিশুসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে পরিবারের কাছে তা হস্তান্তর করলে তাদের দাফনকার্য করা হয়। যদিও পিবিআই মর্মান্তিক এঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, এঘটনার পরদিন ১০এপ্রিল সকালে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে ফাতেমা আক্তার সীমার পিতা মোস্তফা কোতোয়াল বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঐদিনই আরিফ হোসেনকে আটক করে পরদিন সকালে তাকে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করে। আদালত তার জামিন নামজ্ঞুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী অফিসার ফরিদগঞ্জ থানার এসআই মো, শরীফ হোসেন জানান, আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে মামলা দায়েরের পর আরিফ হোসেন রাঢ়ীকে আটক করে চাঁদপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh