জমি কটে দেওয়াকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষে ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা খায়রুল ইসলাম নিহতসহ অন্তত ৩০ জনের আহতের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত শনিবার রাতে নিহতের ভাই মোঃ আনারুল বাদী হয়ে হোসেন আলী প্রামানিক ওরফে হোসেন মাস্টার গ্রুপের বিএনপি নেতা মকলেছুর রহমান মজনুকে প্রধান আসামী করে ২৪ জনকে নামীয় আরও বেশ কিছুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার নামী চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। আর গ্রেফতার এড়াতে পুরোগ্রাম পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে। এই সুযোগে আসামীসহ গ্রাম ছাড়া মানুষদের ঘরের আসবাপত্র, মালামাল, খাদ্য সামগ্রি,গৃহপালিত পশু, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি লুটপাট হচ্ছে। আর লুটপাট রোধে এখন আতংকগ্রস্থ পরিবারগুলো নিজেরাই মালামাল নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে সরিয়ে ফেলছে। এসব ঘটনায় উত্তেজনা,নাশকতা, ক্ষয় ক্ষতিসহ লুটপাট ঠেকাতে পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গ্রামটিতে অবস্থান নিয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
গতকাল (রোববার) সকালে পাবনা ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি আলহাজ্বমোড় এলাকা ঘুরে পুরুষ শুন্য বাড়ির মহিলা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গ্রেফতারকৃত হত্যা মামলার নামীয় আসামীরা হলেন, রুবেল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, আনারুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম।
স্থানীয়া জানান, বেশ কিছুদিন আগে চরগড়গড়ি এলাকার হোসেন আলী প্রামানিক ওরফে হোসেন মাস্টার গ্রুপের রনি প্রতিপক্ষ গ্রুপ হুদি বংশের সাজু হুদি ও খায়রুল ইসলাম প্রামানিক গ্রুপের এনামুলের নিকট দেড় লাখ টাকায় ২০ কাঠা ( এক বিঘা) জমি পুকুর খননের জন্য কট দেন। কিন্তু জমির পরিমান ১৭ কাঠা হওয়ায় এনামুল দেড় লাখ টাকার পরিবর্তে এক লাখ টাকা প্রদান করেন। বকেয়া ৫০ হাজার টাকা না দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রথমে তাদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনায় হুদি গোষ্টির লোকজন চরের মাঠে গিয়ে হোসেন প্রামানিক গ্রুপের শাহিন ও মিঠনকে মারপিট করে। এতে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার দিন শুক্রবার বিষয়টি সমাধানের জন্য দুই গ্রুপই চর গড়গড়ি বাজারে শালিস বৈঠকের আয়োজন করে। কিন্তু দুপুর আড়াইটার দিকে প্রামানিক গ্রুপের লোকজন হুদি গোষ্টির হুজুর আলীকে মেরে নাক দিয়ে রক্ত বের করে দেয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে দুই গ্রুপই দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া, রাম দা, চাপাতি, লোহার পাইপ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে উভয় গ্রুপই ইট পাটকেল ছুড়ে মারে। এক পর্যায় ইটের আঘাতে সাজু হুদির পক্ষের খাইরুল ইসলাম মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে পড়ে যায়। তখন হোসেন প্রামানিক গ্রুপের লোকজন মাথায় কুপিয়ে খাইরুলকে হত্যা করে। আর সাজু হুদি ও খাইরুলের পক্ষের লোকজন হোসেন প্রামানিক গ্রুপের ইসাহক ওরফে ইসাইকে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এই সংঘর্ষে হাসুয়া, রামদা, চাপাতি ও লোহার পাইপের আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এদের ১০ জনের অবস্থা খুবই আশংকাজনক।
আরিফা, হোসনে আরা, ছালেহা, তাসলিমাসহ বেশ কয়েকজন গৃহবধুরা অভিযোগ করে জানান, থানায় নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশী গ্রেফতার ও হয়রানির ভয়ে পুরুষরা গ্রাম ছাড়া হয়েছেন। এই সুযোগে কিছু লোকজন আসামী ও সাধারণ মানুষের বাড়িতে লুটপাট চালাচ্ছে। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, কবুতরসহ আসবাপত্র নিয়ে যাচ্ছে। এই কারণে অনেকেই নিজ উদ্যোগে বাড়ির মালামাল সরিয়ে অন্যগ্রামে নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, খাইরুল হত্যা মামলায় নামীয় চার আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে কিছু মানুষ নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের মালামাল নিজেরাই অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। র্যাব ও ডিবি পুলিশের টহল চলমান রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, চর গড়গড়ি গ্রামে দুই গ্রুপে সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় নিহতের পরিবার থেকে একটি মামলা হয়েছে। অপর পক্ষের হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া ইসাহক আলী ওরফে ইসাই পরিবার বা ওই পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার পর থেকেই
এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশী অবস্থান নিয়েছে। মামলায় সাধারণ মানুষরা যেন অহেতুক হয়রানির শিকার না হন সেই দিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হয়েছে। পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নেবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । সম্পাদক: 01703-137775 । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh