কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ইউনিয়নে ব্রিটিশ আমলের প্রাচীন শিশু বাজারটি কালের সাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে৷ নামে শিশু বাজার হলেও এটি মূলত দুধের বাজার। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যের এই দুধের হাটটি এ অঞ্চলে দুধের চাহিদা মিটাচ্ছে৷
প্রতিদিন ভোরে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে ক্রেতাদের হয় মিলন মেলা গরুর দুধের হাট। এখানে খামারিরা প্রতিদিন বিক্রি করেন প্রায় ৬-৭ হাজার লিটার দুধ। দুধ বিক্রি করে নগদ টাকা পান, তা নিয়ে খুশি খামারিরা।
স্থানীয় প্রবীণ লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে আচমিতা এলাকায় ব্রিটিশদের আনাগোনা ছিলো৷ হোসেনপুর ও কটিয়াদীর জালালপুরে ছিলো নীল কুঠির৷ এরমধ্যে জালালপুর ছিলো এশিয়ার মধ্যে বৃহৎ চুল্লী। যা আজো টিকে আছে। ভৌগোলিক সুবিধা বিবেচনায় বর্তমান আচমিতা নামক এলাকায় তখন বৃটিশরা কয়েকটি প্রাসাদ স্থাপন করে বসবাস শুরু করেন। তাদের ছোট শিশুদের খাবারের জন্য দুধের প্রয়োজনীয়তায় দুধের জন্য শিশু হাট বসান বলে জনশ্রুতি আছে ৷ কালক্রমে আসে জমিদারি যুগ৷ তখন তারাও ভোরে দুধ নিতেন এই হাট থেকে৷ কাক ডাকা ভোর থেকেই এই হাট শুরু হতো৷ যা যুগের পর যুগ ধরে এখনো চলমান৷ আজো আচমিতার মানুষের কাছে শিশু হাট হিসেবে এটি পরিচিত৷
হাটে আগত খামারিরা জানায়, ইউনিয়নের প্রায় হাজারের মতো খামারি দুধেল গরু পালন করেন। তারা উৎপাদন করেন প্রায় ৭-৮ হাজার লিটার দুধ। মাঝারি ও ক্ষুদ্র খামারিরা আচমিতা বাজারে এনে খুচরা ও পাইকারদের কাছে দুধ বিক্রি করেন। এখানে ৮-১০ জন পাইকার দুধ সংগ্রহ করেন।
সকালে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সাইকেল, রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে খামারিরা তরতাজা দুধ নিয়ে আসছেন। কারো হাতে বোতল, কলশি,জগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷ কেউ দুই লিটার, কেউ ১০ লিটার,কেউবা আরো বেশি দুধ এনেছেন। ৭০-৮০ টাকা লিটার খুচরা বিক্রি হচ্ছে। আবার পাইকাররা দুধ কিনে ড্রামে ঢেলে রাখছেন। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে দুধের মিষ্টি ঘ্রাণ। খামারিরা দাম পেয়েছেন প্রতি লিটার ৬০-৭০ টাকা দরে। হাটের অধিকাংশ ক্রেতা মিষ্টির দোকানী। দুধ সংগ্রহ করে মিষ্টি তৈরির কাজে ব্যাবহার করেন৷
দুধ বিক্রেতা আচমিতা গ্রামের জমির উদ্দিন (৭৫) বলেন, 'আমাদের বাপ দাদারা এখানে দুধ বিক্রি করতেন৷ ছোট থেকেই দেখে আসছি৷ এই হাটের বয়স কতো আমিও জানিনা৷ তিন লিটার দুধ নিয়ে আসছি। বিক্রি করে নগদ টাকা পেয়ে ভালো লাগছে।'
বাজিতপুর থেকে আসা ক্রেতা মদন গোপাল বলেন, '৩০ বছর ধরে এই হাট থেকে ভোরে দুধ সংগ্রহ করি৷ পূর্বপুরুষরাও এখান থেকে নিতেন। ৭০ লিটার দুধ নিলাম মিষ্টির দোকানের জন্য৷'
কটিয়াদী-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশেই আচমিতা বাজারে ভোর থেকে শুরু হয়ে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে এই হাট৷