দেশের উদিয়মান তরুণ বিজ্ঞানী পাবনা ঈশ্বরদীর তাহের মাহমুদ তারিফ (১৯) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কস্থ উপজেলার দাশুড়িয়ার কালিকাপুর এলাকায় সিএনজিকে পেছন থেকে একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত তারিফ বর্তমানে ঈশ্বরদীর সরকারি কলেজ এলাকার মৃত আব্দুস ছালামের ছেলে।
নিহতের পরিবারের রবাত দিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. আরিফুল ইসলাম জানান, সকালে আগামী মাসে একটি বৈজ্ঞানিক মেলায় নতুন উদ্ভাবনীর জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য সিএনজি যোগে ঈশ্বরদী থেকে পাবনায় যাচ্ছিল তারিফ। চলন্ত সিএনজিটি দাড়িয়ে গেলে পেছন থেকে যাওয়া ট্রাকটি সিএনজিকে ধাক্কা দেয়। তখন তারিফের নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার হাত পায়ের হাড় ভেঙ্গে যাওয়া ধরা পড়ে। তখন তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
ঈশ্বরদী নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাস জানান, তারিফ একজন উদীয়মান ক্ষুদে বিজ্ঞানী। সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হওয়ার খবর পেয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথে টাঙ্গাইলে তারিফ মারা যায়।
ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব এসএম রবিউল ইসলাম জানান, তাহের মাহমুদ তারিফ গত বছর কলেজ থেকে এইচ এসসি পাশ করেছে। সে দেশের একজন উদীয়মান ও আগামী দিনের জন্য চরম সম্ভাবনাময়ী একজন আবিষ্কারক হিসেবে ইতোমধ্যে আলোচিত হয়ে উঠেছিল। তার অকাল মৃত্যুতে দেশ আবিষ্কার জগতের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারালো। আমার সকলে গভীরভাবে শোকাহত।
সরকারি সাড়াঁ মারোয়াড়ি স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল হক শাহিন জানান, নিহত তারিফ আমাদের স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ৯ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী থাকাকালিন সময়ে অক্সিজেন জেনারেটর ও কনসেনট্রেটর আবিষ্কার করে। তার অকাল মৃত্যুতে দেশবাসী চরম সম্ভাবনাময়ী একজন আবিষ্কারককে হারালো। বুধবার সকালে এই খুদে বিজ্ঞানী মরাদেহ ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হবে।
এদিকে সড়ক দূর্ঘটনায় তারিফের আকস্মিক মৃত্যু ঈশ্বরদীতে শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারিফ করোনাকালীন সময়ে দেশে অক্সিজেনের সংকট মূহূর্তে স্বল্প খরচে কৃত্রিম অক্সিজেন উৎপাদন যন্ত্র ‘অক্সিজেন কনসেনট্রেটর’ আবিষ্কার করে দেশজুড়ে আলোচিত হয়েছিলেন। এই উদ্ভাবনের স্বীকৃতিস্বরূপ ক্ষুদে উদ্ভাবক হিসেবে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে শেখ রাসেল স্বর্ণ পদক অর্জন করেন। এছাড়াও স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন উদ্ভাবন করেন।
২০২০-২০২৩ সাল পর্যন্ত তারিফ চারবার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন।
সুত্র মতে, তারিফ ঈশ্বরদী সরকারী সাঁড়া মাড়োয়ারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ৯ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী থাকাকালিন সময়ে করোনায় তার বাবাকে অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে দেখেন। একই সঙ্গে অক্সিজেনের অভাবে মানুষ কীভাবে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে দেখেন। এই কষ্টটি তঁার আবিষ্কারক মনকে নাড়া দেয়। অক্সিজেনের অভাবে কাউকে যেন এভাবে মৃত্যু বরণ করতে না হয় এই সংকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেন। নিজের উদ্ভাবন করেন অক্সিজেন জেনারেটর ও কনসেনট্রেটর।
যা সাধারণত প্রতি মিনিটে ২৫ লিটার বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করতো। অক্সিজেন জেনারেটর ও কনসেরট্রেটর বাতাসের ২১ শতাংশ অক্সিজেনকে প্রক্রিয়াজাত করে ৯৮ শতাংশে রূপান্তর করে। যন্ত্রটি একটানা সাত ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহে সক্ষম। এরপর ১০ মিনিট বিরতি দিলে আবারও টানা সাত ঘণ্টা চলে। তারিফ নিজের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে এর নামকরণ করেছেন ‘টিএলআর-সিভি-১৯’।
এছাড়াও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের আকর্ষিক পিরিয়ড শুরু হলে তাৎক্ষনিক সমাধানের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন উদ্ভাবন করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh