ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের সংরক্ষিত (মহিলা) সদস্য নরুন্নাহার ও তার মেয়ে সদ্য ঘোষিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে একসাথে পাস করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন।
চাতলপাড় ইউনিয়ন এর ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের (মহিলা) সদস্য মোছা. নরুন্নাহার বেগম (৪৪) মোছা. নরুন্নাহার বেগম নিজের মেয়েসহ তার সমতুল্য বয়সী পরীক্ষার্থীদের সাথে চলতি সনে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়ে আবারও প্রমান করেছেন শিক্ষার কোনো বয়স নাই, চাইলেই সবকিছু সম্ভব।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মোছা. নরুন্নাহার বেগম বলেন, “এসএসসি পরীক্ষার আগেই আমার বিয়ে হলে আর লেখাপড়া করতে পারি নাই। লেখাপড়া করার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বিয়ের পর এক ছেলে ও মেয়ে জন্ম নিলে পরিবার সামলাতে এবং ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করার লক্ষ্যে নিজে লেখাপড়া করার সুযোগ পাই নাই। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা আমার ভাই, বাবা, স্বামীসহ নিকট আত্মীয়দের জানালে তাদের উৎসাহের ফলে কারিগরী মাধ্যমে পড়া লেখা করে আমি পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষার খবর অন্য কেউকে জানাইনি। গতকাল এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হলে আমি দেখতে পাই, আমি জিপিএ-৪.৫৪ পেয়ে পাস করেছি। তখন আমি খুশিতে আত্মহারা। আমার পাসের সংবাদ পেয়ে বাড়িতে প্রচুর লোকের সমাগম হচ্ছে। মোবাইল ফোনে অনেকে উৎসাহ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছেন। এতে আমি ও আমার পরিবার সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
এ বিষয়ে প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মোঃ আহসান উল্লাহ হাসান বলেন, এটি আমাদের বর্তমান সমাজের মানুষের জন্য যেমন অনুকরণীয়, তেমনই খুশির একটি খবর। কারণ, আমাদের দেশের বর্তমান হাল অবস্থায় অল্প বয়সে বিয়ে বা বাল্য বিবাহের কারণে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান ভবিষ্যৎ। এর জন্য দায়ী অল্প শিক্ষিত মা বাবা এবং কিছু সংখ্যক ইউপি সদস্য (মেম্বার) ও কাজী। তবে সচেতন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে সন্তান ও সংসার সামলেও কোন নারী যে তার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সক্ষম হন এটিই এতে প্রমাণিত হয়েছে। এ দিকে সকলেরই মনোযোগ দেয়া অত্যাবশ্যক।