বিয়ের প্রলোভনে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের পর একই অপরাধে শালিসের নামে ভুক্তভোগী মেয়ে ও তার মাসহ পরিবারের অন্যান্যদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান আতংকিত হয়ে ভুক্তভোগির পরিবারের সদস্যরা প্রায় গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
সোমবার (১৩ মে) ভুক্তভোগীর এলাকার পাবনা ঈশ্বরদীর সলিমপুরের মানিকনগর তিন শিমুলতলা মোড় ও শহরের ভাটাপাড়া এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ও সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল আজিজের ছেলে শাকিল (২৮) উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের তিন শিমুলতলা এলাকার বাসিন্দা ও নাটোরের একটি ব্যক্তিমালিকাধীন ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই সম্পর্কের জেরে শাকিল ওই মেয়েকে নিয়ে নাটোর, রাজশাহী, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাত্রী যাপন করে ধর্ষণ করে। এমনকি ওই মেয়েকে নিয়ে শাকিল ভারতেও বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ করে। এসব চিত্র বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণসহ মোবাইলে ধারণ করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক হওয়া লম্পট সেলিমের সহযোগিতায় নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখে শাকিল।
এসব ভিডিও দেখিয়ে প্রায়ই ওই স্বাস্থ্য সেবিকা ধর্ষণ করে আসছিল লম্পট শাকিল। অবশেষে মাসখানিক পূর্বে ওই স্বাস্থ্য সেবিকা বিয়ের জন্য শাকিলকে চাপ দেয়। তখন শাকিল নানা রকম ভয়ভীতি ও হামলার হুমকি ধামকি দিয়ে স্বাস্থ্য সেবিকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে অন্য মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে উঠাবসা শুরু করে। বিষয়টি জানার পর স্বাস্থ্য সেবিকা বিয়ের দাবীতে লম্পট শাকিলের দাবীতে অবস্থান নেয়। কিন্তু অর্থ ও লোকবলের প্রভাবে আব্দুল আজিজ ওই স্বাস্থ্য সেবিকাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে নিরুপায় হয়ে ওই স্বাস্থ্য সেবিকা তার দুলাভাই জীবনকে সঙ্গে নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যায়। কিন্তু ধর্ষনের আলামত পাওয়া যাবে না এবং যেখানে ধর্ষনের শিকার হয়েছে সেখানকার থানায় মামলা দায়ের করার পরামর্শ দিয়ে থানা থেকে ভুক্তভোগিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে থানা পুলিশকে সঙ্গে শাকিলের বাবা মাছ আজিজ ওই ভুক্তভোগি মেয়েসহ তার পরিবারকে মুলাডুলির সরাবাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে বন্ধি করে শালিস করে। সেই শালিসের দেড় লাখ টাকার মধ্যে ভুক্তভোগি মেয়ের পরিবারকে নানা ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মাত্র ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করে। বাকি টাকা ইউপি মেম্বার, স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ভাগাভাগি করে নেয়।
ভুক্তভোগি পরিবার আরও জানায়, বিষয়টি ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রনি জানতে পেরে শালিসের জন্য ডাকে। শালিসের জন্য কয়েক দফায় ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের সামনে পৌর যুবলীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বিপ্লবের অফিসে যাওয়া হয়। সেখানে লম্পট শাকিলের বাবা আব্দুল আজিজের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জরিমানার এক লাখ ৩ হাজার টাকা উদ্ধারের চেষ্টা কওে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রনি। এই সময় সংবাদ পেয়ে সাংবাদিকরা আলাউদ্দিন বিপ্লবের কার্যালয়ে গেলে রনি টেলিভিশনের এক সাংবাদিকের সঙ্গে চরম অশালিন আচরণ করে।
এই ব্যাপারে সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার স্বপন জানান, ভুক্তভোগী স্বাস্থ্য সেবিকা (মেয়ে) ও তার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে ওই মেয়ের চাচাতো দুলাভাইয়ের বাড়িতে শালিস করা হয়। সেখানে ভুক্তভোগি মেয়েকে দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়েটি ৪৭ হাজার টাকা পেয়েছে। বাকি টাকা কি হয়েছে তা ভুক্তভোগি মেয়ের ফুফা ও স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতারা বলতে পারবে।
ভুক্তভোগি স্বাস্থ্য সেবিকার বাবা জানান, শাকিল আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। বিচার চাওয়ায় শাকিলের বাবা আব্দুল আজিজ টাকা ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে থানায় মামলা ও গ্রেফতারসহ হয়রানির ভয় দেখিয়ে স্ট্যামে দেড় লাখ টাকা উল্লেখ করে স্বাক্ষর নিয়ে ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করে। আমরা লম্পট শাকিলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
ভুক্তভোগি স্বাস্থ্য সেবিকা কান্নাজনিত কন্ঠে জানান, এসব ঘটনায় মানসিক ও শারিরিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। তবে শাকিল তার সর্বনাশ করেছে। তাই তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার দাবী করেন।
এ ব্যাপারে পৌর যুবলীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বিপ্লব জানান, বিষয়টি আমরা মীমাংসা করার চেষ্টা করছি। কার্যালয়ের বাইরে গিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রনি সাংবাদিকের সঙ্গে যে আচরণ করেছে তা খুবই দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে শাকিলের বাবা আব্দুল আজিজ ওরফে মাছ আজিজ জানান, ভুক্তভোগী মেয়ে ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নয়, ঘরোয়াভাবে বসে মীমাংসা করা হয়েছে। এই বিষয়ে লেখালেখি না করার জন্যও অনুরোধ করেন আব্দুল আজিজ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh