গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ঘগোয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজনও এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেনি।
এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা, কল্পনা, আলোচনা, সমালোচনা, বিভিন্ন দপ্তরের পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান ও তদন্ত ।
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য বাল্য বিয়ে, চরাঞ্চলের দুর্বল ও দিনমজুর পরিবারের শিক্ষার্থী, প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা এবং শিক্ষকগণের আন্তরিকতার অভাবকে দায়ি করা হয়েছে। তবে ফেল করা শিক্ষার্থীরা পাশ না করার কোন কারণ অনুমান করতে পারছেন না। তারা এ ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডকে দায়ি করছেন।
জানা গেছে, ২০২৪ সালে ওই স্কুল হতে ১৪ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন। তারা সকলে মানবিক শাখার শিক্ষার্থী ছিল। এদের মধ্যে ৮ জন শিক্ষার্থী ছিল বিবাহিত। স্কুলে ৮ম এবং নবম শ্রেনিতে পড়াকালিন সময় তাদের বিয়ে হয়। এদর মধ্যে একজনও পাশ করেনি।
বিগত তিন বছরের ফলাফলে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ১৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১৩ জন, ২২ সালে ২১ জনের মধ্যে পাশ করেছে ১৭ জন এবং ২১ সালে ১৬ জনের মধ্যে পাশ করেছে ১৩ জন। চলতি বছর এমন ফলাফল নিয়ে মারাত্বকভাবে আহত হয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুধীজন।
উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত তারাপুর ইউনিয়নের ঘগোয়া গ্রামে নারী শিক্ষা প্রসার ঘটানোর জন্য ১৯৯৪ সালে স্থানীয় সুধীজন স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালে মাধ্যমিক এই স্কুলটি এমপিও ভূক্ত ( মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৩ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিমাসে এমপিও এর মাধ্যমে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৪৬ টাকা দেন।
প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হাকিম মিয়া চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন।
ফেল করা শিক্ষার্থী বৃষ্টি রানী বলেন , গনিত পরীক্ষা তার ভাল হয়েছে, কেন সে ওই বিষয়ে ফেল করেছেন, তা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। তিনি পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করবেন। স্কুলে পড়াকালিন সময়ে অসহায় পিতা-মাতা তাকে বিয়ে দিয়েছেন, স্বীকার করে তিনি বলেন, সে নিয়মিত স্কুলে যেতে পারেনি। তবে পরীক্ষায় পাশ করার মত উত্তর সে দিয়েছে। ফেল করা শিক্ষার্থী দিপা রানী এবং মৌসুমী আক্তার একই দাবি করেন।
অভিভাবক মো. আব্দুল মান্নান জানান, ৩০ বছর ধরে স্কুলটি হতে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, কোনবার এমন ফলাফল হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির আশপাশ অনেক ভাল স্কুল আছে, যদিও স্কুলটিতে অসচেতন অভিভাবকের দুর্বল মেয়েরা লেখাপড়া করে, তারপরও ফলাফল এমন হওয়ার কথা নয়। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হাকিম মিয়া বলেন , তিনি চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। বেশ কয়েক মাস স্কুলটিতে নানা জটিলতা বিদ্যমান ছিল। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৮ জন ছিল বিবাহিত। এছাড়া শিক্ষার্থীরা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। এমনকি নিয়মিত স্কুল করেনি তারা। অনেকে অভিভাবকের সাথে গৃহস্থালীর কাজ করেছে। সেই সাথে শিক্ষকগণের আন্তরিকতার অভাব ছিল। সবমিলে ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়টি তিনি রহস্যজনক দাবি করে পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন করবেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, সোমবার সরেজমিন স্কুলটি পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষককের নিকট হতে ফলাফল বিপর্যয়ের কারন উল্লেখ করে লিখিত জবাব নেয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, বাল্য বিয়ে, দুর্বল শিক্ষার্থী, চরাঞ্চলের অসচেতন অভিভাবক এবং শিক্ষকগণের আনন্তরিকতার অভাবের কারণে ফলাফল এমনটি হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিসার মোছা. রোকসানা বেগম জানান, প্রধান শিক্ষককের নিকট ফলাফল বিপর্যয়ের কারন জানতে চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh