কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঐতিহ্যবাহী আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকাররম হোসেন শোকরানার বিরুদ্ধে ভুয়া ও জাল সনদে আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে নিয়োগ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ‘মনগড়া বিশেষ’ ভাতার নামে অবৈধ টাকা উত্তোলন, শিক্ষক/কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ রেখে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত দেশত্যাগ করে স্কুলে অনুপস্থিত থাকাসহ প্রাতিষ্ঠানিক আয়-ব্যয়ের অসচ্ছতার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এসব কারণে ওই প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম বাবু।
জানা গেছে, ১৯১৬ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে শোলাকিয়ায় আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন দানবীর মুন্সী আজিম উদ্দিন আহাম্মদ সাহেব। যুগ যুগ ধরে শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রাখা শতবর্ষী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এখন আলোচিত ভুয়া ও জাতিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ নিয়ে।
তবে যে প্রধান শিক্ষকের এত দুর্নীতি সেই প্রধান শিক্ষক মোকাররম হোসেন শোকরানা ২০২৪ সালে ময়মনসিংহ অঞ্চল পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক ও কিশোরগঞ্জ জেলা পর্যায়ে ২০১৮, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে তৃতীয়বারের মতো ও টানা দুইবার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৭ নভেম্বর মাধ্যমিক শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়টির তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক একজন আয়া ও একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন। এরপর আয়া পদে ৩৫ ঊর্ধ্ব মোছা. লিপা আক্তার ও পরিচ্ছন্নকর্মী পদে ৩৫ ঊর্ধ্ব মো. খোকনকে ভুয়া ও জাল সনদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর এমপিওভুক্ত করে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন বাবদ অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলন করেন।
প্রতিবেদকের হাতে আসা নথি অনুযায়ী, আয়া পদে ৩৫ ঊর্ধ্ব মোছা. লিপা আক্তার ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে ৩৫ ঊর্ধ্ব মো. খোকন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার দেহুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল প্যাড নকল করে দুটি ভুয়া অভিজ্ঞানপত্র তৈরি করে আবেদনের সঙ্গে জমা দেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকাররম হোসেন শোকরানা বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমন কোনো কিছু আমার স্কুলে হয়নি। আমরা যাচাই-বাছাই করেই তাদের নিয়োগ দিয়েছি।
দেহুন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুস ছালাম বলেন, আমি দুটি অভিজ্ঞানপত্র যাচাই করে দেখেছি দুটি অভিজ্ঞানপত্রই সম্পূর্ণ ভুয়া ও অগ্রহণযোগ্য। কারণ উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রয়াত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মুনসুর আলী বিগত ২০০৩ সালে ইন্তেকাল করেছেন। কাজেই উনার স্বাক্ষরিত ২০১০ সালের অভিজ্ঞানপত্র সঠিক নয়। এছাড়া উনার স্বাক্ষরিত বিভিন্ন কাগজপত্রাদিতে দেওয়া স্বাক্ষর যাচাই করে দেখা যায়, অভিজ্ঞানপত্রে দেওয়া স্বাক্ষরের সঙ্গে মোাহাম্মদ মনসুর আলী স্যারের স্বাক্ষরের কোনো ভাবেই মিল নেই। কাজেই সার্বিক বিবেচনায় অভিজ্ঞানপত্র দুটি ভুয়া এবং বাতিল যোগ্য।
ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বাবু বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি আমি সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি এ নিয়োগ দুটি আইন সংগত হয়নি। ভুয়া, জাল ও জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছে। এছাড়া উনি (প্রধান শিক্ষক) বিশেষ ভাতার নামে প্রতি মাসেই বিশেষ ভাতার অর্থ উত্তোলন করে স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ করছেন। এ বিষয়ে আমি উনাকে (প্রধান শিক্ষককে) কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি এবং শিক্ষা অধিদফতর, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অনুলিপি প্রদান করেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রোকন উদ্দিন আহমেদ বলেন, আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়া এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh