পা কেটে ফেলা, দাঁত ভেঙে ফেলা, মাথা ফাটিয়ে দেওয়াসহ নানাভাবে অঙ্গহানী এবং অনেক রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ ৫০ বছর পর জমির দখল ফিরে পেলেন প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা পরিবার। নেতা ও ভূমি জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে ওই জমি ক্রয় করে বসতি গড়ে তোলা অন্তত ১২টি পরিবারসহ নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করে সাড়ে ৪১ শতাংশ জমির দখল বুঝিয়ে দিলেন আদালত। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে পাবনা ঈশ্বরদী শহরের আমবাগান এলাকাতে আদালতের নির্দেশে ঈশ্বরদী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ম্যাজিষ্ট্রেট শাহাদাত হোসেন খান উচ্ছেদ করে প্রকৃত মালিক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে দখল বুঝিয়ে দেন।
জমির মালিক প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা আফিল উদ্দিন প্রামানিক ও আব্দুল রশিদ গংদের মধ্যে ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলাম, মাহাবুল আলম বলেন. বাবা ও চাচা রিক্সচালক ও দিন মজুর ছিলেন। শহরের পাতিলাখালি মৌজার আমবাগানে সাড়ে ৪১ শতাংশ জমির উপর আমাদের বসতভিটা ছিল। ১৯৭১ সালে আমাদের বাবা ও চাচা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এই কারণে রাজাকারদের সহযোগিতায় পাক বাহিনী আমাদের ভিটাবাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ভস্মিভুত করে দেয়। এসময় আমরাভিটা ছাড়া হয়ে যায়। তখন স্থানীয় প্রভাবশালী জৈনক শাহাবুদ্দিন, আবুল ও আফজালগণরা আমাদের বসত ভিটা দখল করেন। সেখানে তাদের পছন্দের লোকজনদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে ঘর বাড়ি তৈরীর জন্য প্লট করে ভাগ করে দেন। মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের বাবা ও চাচা ফিরে এসে পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া জমি আর দখল পাননি। তখন আমাদের বীরমুক্তিযোদ্ধা বাবা ও চাচা ভিটে ছাড়া হয়ে আমাদের নিয়ে ঈশ্বরদী সরকারী কলেজের বারান্দায় উঠি। অনেকদিন কলেজ কক্ষেই বসবাস করেছি। বাবা ও চাচা রিক্সা চালিয়েছেন। আমরা সবাই অর্ধহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করেছি। এরপর জমির দখল ফিরে পেতে আমাদের বাবা আদালতে মামলা করেন।
তাঁরা আরও বলেন, আমাদের বাবা রিক্সা চালিয়ে দীর্ঘ ৩০ বছর মামলা চালিয়ে ২০০৪ সালে মারা যান। তিনি বেঁচে থাকতে জমির দখল ফিরে পেতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। এরপর আমাদের বোন বিগত ২০ বছর ধরে মামলাটি চালিয়ে আসছেন। নিন্ম আদালত থেকে শুরু সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা চালিয়ে প্রতিটি আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় অবৈধ দখলদারদের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। আপিল বিভাগ থেকে আমাদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। এরপর বিগত ৪ বছর আগে আমরা আদালতের রায় নিয়ে জমির উপর আসি। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী অবৈধ দখলদাররা আমাদের কুপিয়ে, পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছিল।
রফিকুল ইসলাম বলেন, অবৈধ দখলদাররা হামলা চালিয়ে আমার পা ভেঙ্গে ফেলে। পরে চিকিৎসকরা হাটু পর্যন্ত কেটে ফেলেছে। আমার ছোট ভাই মাহাবুল আলমকে পিটিয়ে দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার ভাগ্নেসহ বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছিল।
বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা আফিল উদ্দিন প্রামানিকের মৃত্যুর পর মামলা পরিচালনাকারী মেয়ে ফজিলা বেগম বলেন, আমাদের জমি থাকা সর্তেও আমরা পরের জমিতে বাস করেছি। দীর্ঘকাল পর আদালত আমাদের জমির দখল ফিরে দিয়েছেন। আমরা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে বাব দাদার ভিটে বাড়িতে শান্তিতে বসবাস করতে পারবো। এই জমি ফিরে পেতে আমাদের প্রায় ৫০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। অভাবের কারণে আমাদের বাব চাচা আমাদের লেখাপড়া করা পারেনি। সবাই রিক্সাচালক, দিন মজুর। রিক্সাচালিয়ে মামলা চালিয়ে এসেছি। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমাদের কষ্ট স্বার্থ হয়েছে।
অবৈধ দখলদার হিসেবে উচ্ছেদ হওয়া আয়েশা বেগম (৭৫) বলেন, বিগত প্রায় ৪২ বছর ধরে তিনি ছেলেমেয়ে এখানে বসবাস করছি। ঢাকা থেকে ঈশ্বরদীতে এসে স্থানীয়দের মাধ্যমে আমার স্বামী আজিজুর রহমান দলিলের মাধ্যমে শ্রীরাম আগারওয়ালার নিকট থেকে জমি ক্রয় করেছিলেন। অথচ আজ আমাদের উচ্ছেদ করা হলো।
ঈশ্বরদী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ম্যাজিষ্ট্রেট শাহাদাত হোসেন খান বলেন, আদালতের নির্দেশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে জমির প্রকৃত মালিক প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা আফিল উদ্দিন প্রামানিক ও আব্দুল রশিদ গংদের নিকট বুঝে দেওয়া হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh