কোরবানিকে সামনে রেখে সিলেটে কৃষক ও খামারিরা ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৯২১ পশু মজুত করে রেখেছেন। উন্নত মানের খাবার দিয়ে তারা এসব পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। তবে পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও এবার লাভের মুখ দেখবেন বলে আশাবাদী খামারিরা।
খামারিরা জানিয়েছেন গো খাদ্যের দাম বহুগুণ বেড়েছে। ফলে দাম বেড়েছে পশুর।
ঈদুল আযহায় সিলেট জেলায় কুরবানি পশুর চাহিদা ১ লাখ ৫০ হাজার ৭০৯ টি। এরমধ্যে কুরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯২১টি পশু। উদ্বৃত্ত থাকা ৩০ হাজার ২১২টি পশু অন্যান্য জেলায় রপ্তানি করা যাবে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার খামারি শাহজাহান আহমেদ বলেন, তিনি খামারে কোরবানি ঈদের জন্য ১১টি গরু প্রস্তুত করেছি, ইতোমধ্যেই ৭টি বিক্রি করেছি। এতে আমার সাড়ে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭টি গরু ৯লাখ টাকা বিক্রি করেছি। আশা করছি বাকি গরুগুলো বিক্রি করতে পারলে আরো লাভ হবে। তাছাড়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে আমাদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে গো-খাদ্যের দাম আরেকটু কম হলে আরো বেশী লাভ হত।
গোয়াইনঘাটের ডৌবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক ঝলক দাস বলেন, কোরবানির জন্য ২টি প্রস্তুত করেছেন। দুটি গরুতে দাম চাচ্ছেন ১ লাখ ৯০ হাজার। এখন ক্রেতারা দামাদামি করছেন। দুটি গরুতে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদি আমরা যে দামে চাচ্ছি যে দামে বিক্রি করতে পারি তাহলে লাভ হবে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার খামারি সাইফুল ইসলাম তিনি বলেন, আমার খামারে ৫০ টি গরু রয়েছে। এগুলোকে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করতে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তাছাড়া বাজারে পশুখাদ্যের দাম দ্বিগুণ এরমধ্যে তীব্র গরমের কারণে পশুর জন্য বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। দিনে দুবার গোসল করাতে হচ্ছে। পশুকে ২৪ ঘণ্টা বাতাসের মধ্যে রাখতে হয়। খাবারের সঙ্গে সোডা দিতে হয়। প্রতিনিয়ত শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করতে হয়। আবার ফসলের মৌসুম হওয়ায় শ্রমিকের মজুরি বেশি দিতে হচ্ছে। তবে সবগুলো গরু বিক্রি করতে পারলে কিছুটা লাভ হবে।
সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের ডেপুটি চীফ এপিডেমিওলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ আছির উদ্দিন, এবার সিলেট বিভাগে কোরবানি হবে প্রায় ৩ লাখ ৯৪ হাজার ২৫১টি পশু এর বিপরীতে প্রস্তুত আছে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৭ টি পশু। এরমধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৮০ টি ষাঁড়, ৪৯ হাজার ১০৩ টি বলদ, ৩৩ হাজার ৩৭৫টি গাভি, ৪ হাজার ৫৩৩টি মহিষ, ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৩টি ছাগল, ৭০ হাজার ৯৫৩টি ভেড়া ও ১১০ টি অন্যান্য পশু রয়েছে
এবার সিলেট জেলায় কোরবানির চাহিদা আছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭০৯টি পশুর এর বিপরীতে জেলায় প্রস্তুত আছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯২১টি পশু। এরমধ্যে ৬১ হাজার ৫৪০ টি ষাঁড়, ৩২ হাজার ৪ টি বলদ, ৬ হাজার ১৫১টি গাভি, ২ হাজার ৩৯২ টি মহিষ, ৫৬ হাজার ৯২ টি ছাগল, ২২ হাজার ৭৩৭ টি ভেড়া ও অন্যান্য ৫টি পশু রয়েছে। এবার কোরবানির চাহিদা পূরণ করে জেলায় ৩০ হাজার ২১২টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। সিলেট বিভাগে ২২ হাজার ৫৭৬ জন খামারি রয়েছেন এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৬ হাজার ৮৫৮জন।
গত বছরের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, গত বছর জেলায় কোরবানি পশুর ঘাটতি থাকলেও এবার উদ্বৃত্ত আছে ৩০ হাজার ২১২টি পশু। তাছাড়া এক বছরের ব্যবধান সিলেট বিভাগে খামারি বেড়েছে ১০হাজারের ওপর। গত বছর বিভাগে ২১ হাজার ৬৮৮ জন খামারি থাকলেও এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৫৭৬ জনে। তাছাড়া প্রতিটি খামারে ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের কোরবানির পশু রয়েছে। খামারিকে গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট করণের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্টেরয়েডের ব্যবহার রোধে উপজেলা পর্যায়ে উঠান-বৈঠক করে খামারিকে হাতে কলমে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ডা. মোহাম্মদ আছির উদ্দিন বলেন, এবার সিলেট বিভাগে কোরবানি যোগ্য পশুর কোনো ঘাটতি নেই। বরং উদ্বৃত্ত আছে ৩৬ হাজার ১৪৬টি পশু। তাই এবার পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পশু আনার কোনো দরকার নেই। গোখাদ্য ও সব জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের ব্যয় বেড়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh