× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও ঘটনাবহুল ২০২৪ সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বাঘার মেয়র আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে উপজেলা আ.লীগের দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন! নেপথ্যে কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুন ২০২৪, ১৮:৩২ পিএম

পুরাতন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘ দিনের বেতন-ভাতা বাকি রেখেও নতুন করে জনবল বৃদ্ধি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন বাঘা পৌরসভার সাবেক মেয়র জামায়াত বিএনপিসমর্থিত আব্দুর রাজ্জাক। বিদায়ী বছরে (২০১৭-২০২২) পৌরসভার রাজস্ব তহবিল ছিলো শূন্য। এডিপি ফান্ডেও  ছিল না কোন টাকা। মাসের পর মাস বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত ছিলো কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলরগণ। 

জ্বালানি  তেলের বকেয়া  ৩ লক্ষ ২ হাজার  টাকা ও  বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া ছিলো ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা। পিএফ গ্রাচুইটির দেনা ছিলো প্রায়  ৩০ লাখ। মুক্তিযোদ্ধা সাতভূমি খাতে বকেয়া ছিলো ৪ বছরে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। রাজস্ব খাতে আয়ের  টাকা জমাও বাকি ছিলো প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। ঠিকাাদারি বিল বাকি অর্ধকোটি টাকা।

প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় নাগরিক সুবিধা ছিলো না বললেই চলে। ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ছিলো বেহালদশা। দীর্ঘদিন  সংস্কার না  করায় পৌরসভার  অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা ছিলো করুণ। বিভিন্ন এলাকার লাইটিং ব্যবস্থাও ছিলো নাজুক। সব মিলিয়ে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা ধরে রাখাযটায় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার। 

এমতাবস্থায় পৌরসভায়  জনবল বৃদ্ধিতে মরিয়া  হয়ে উঠেছিলেন জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত তৎকালীন পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক ও প্যানেল মেয়র-১ শাহিনুর রহমান পিন্টু। সমস্যার সমাধান না করে পৌরসভায় জনবল বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় পৌর স্টাফসহ সচেতন নাগরিকরা বিস্মিত হলেও রা শব্দ করেন নি  উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মী। সেই মেয়রের অবৈধ কর্মকান্ডের প্রতিবাদে পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর (৩নং ওয়ার্ল্ড) সাইফুল ইসলাম টগর অভিযোগ করায় তার  ভাতা বন্ধ করে  দিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র রাজ্জাক । এমনকি মেয়রের পক্ষ নিয়ে অভিযোগকারী কাউন্সিলরকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেছিলেন প্যানেল মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিনুর রহমান পিন্টু। বন্ঞ্চিত করা হয় নিজ ওয়ার্ডের  জনগনের জন্য বরাদ্দকৃত পৌরসভার সকল ধরনের নাগরিক সুবিধাসহ এলাকার  উন্নয়নমূলক কাজ  থেকে।

শুধু তাই নয়, জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত মেয়রের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রকল্প দাখিল করে বিল উত্তোলন, হাট-বাজার ও  পৌর মার্কেট ইজারার অর্থ  লোপাট, এডিপি  প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, বিমান ট্রাভেল এজেন্সিতে বাকি পরিশোধ না করা, ডেঙ্গু ও  করোনাকালিন সংকটের নামে ভুয়া ভাউচার দাখিল এবং  তৎকালীন সময়ে চলমান ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৬টি কাজে অনিয়মের  অভিযোগের কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন ও  জেলা  প্রশাসকসহ  বেশ কয়েকটি দপ্তরে  অভিযোগ হলেও পৌর মেয়র রাজ্জাকের বিরুদ্ধে  ব্যবস্থা নিতে কোন পদক্ষেপ ছিলো না উপজেলা আওয়ামী লীগের। বরং তার (মেয়রের) দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুললেই উপজেলা আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়তে হয়েছে অনেককে।  পৌর  মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এত এত  অভিযোগের পরেও  নিরব থাকা সেই নেতারা কেন হঠাৎ করে বাঘা পৌরসভার বর্তমান মেয়র রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে তার পেছনের রহস্যটা কি তা বের করতে সংবাদ সারাবেলা প্রতিনিধিরা অনুসন্ধানে নামেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা তথ্যের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব।

দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীর বাঘা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির নামে ভূমি রেজিস্ট্রেশনে  অতিরিক্তি টাকা আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও জনভোগান্তি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হযষয়ে আসছে। আর তথাকথিত ওই কমিটির সভাপতি সম্পাদক নির্ধারণ করেন স্থানীয় সাংসদ সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদসহ সরকারি ফি’র মাধ্যমে জমি রেজিস্ট্রির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে জনতার মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।  

জানা যায়, বছরের পর বছর দলিল লেখক সমিতির নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। এতে জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হন, যারা সমিতির নামে সভাপতি-সম্পাদকের চেয়ারে বসেন। অনেকেই নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। জনগণের ভোগান্তি কমাতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে  স্থানীয় সাংসদ শাহরিয়ার আলম এই অনিয়ম জুলুমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে নিজের পছন্দের লোককে নামমাত্র সমিতির সভাপতি-সম্পাদক বানিয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জনে সহায়তা করেন।  

সম্প্রতি (৫ জুন) বাঘা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন শাহিনুর রহমান পিন্টু। অপরদিকে স্থানীয় সাংসদ তথা উপজেলা আওয়ামী লীগ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রোকনুজ্জামান রিন্টুকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন। এরপর রোকনুজ্জামান রিন্টুকে বিজয়ী করতে শাহিনুর রহমান পিন্টুকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন স্থানীয় সাংসদসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এজন্য  তাকে (পিন্টু) দলিল লেখক সমিতির প্রথমে সম্পাদক পদ দেয়। তবে কয়েক দিন পর পিন্টুকে সভাপতি করে সাবেক কমিটির নয়নকে সম্পাদক পদে বহাল রাখা হয়। তবে এ কমিটি  দায়িত্ব নিতে গেলে অধিকাংশ দলীল লেখক তাদের প্রত্যাখ্যান করে এবং অবৈধভাবে ঘোষিত কমিটি বাতিলসহ সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান করেন। 

তারা কমিটির নামে সভাপতি সম্পাদকের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদসহ সরকারি ফি এর মাধ্যমে জমি রেজিষ্ট্রি দাবিতে গত (২০ জুন)  বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারনের ব্যানারে জনতার মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে আন্দোলন শুরু করে। তাদের এ আন্দোলনে সহমত পোষণ করেন উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু, বাঘা পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাস আলী, সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, উপজেলার পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা বাবু প্রশান্ত পান্ডে।

দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম স্বপনসহ সচেতন নাগরিকবৃন্দ। সাধারণ দলীল লেখক সহ জনগনের যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে  জমি রেজিস্ট্রি  করার জন্য  মানববন্ধনে বজ্রকণ্ঠে দাবি করেন পৌর মেয়র আক্কাস আলী। আর এতে করে  সাধারণ জনতা ফূসে উঠে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের প্রতিবাদে। আর এতে মাথায় বাজ পরে শাহরিয়ার আলমসহ তার অনুসারীদের। 

যথারীতি অতীতের মতোই শুরু  আক্কাস ঠেকাও মিশনের চক্রান্ত। সেই চক্রান্ত বাস্তবায়নে পৌরসভার কোন কর্মকর্তা কর্মচারী এমনকি কোন কাউন্সিলর বৃন্দ  সম্পৃক্ত না থাকলেও তিন তিনবারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান দুই বারের নির্বাচিত পৌর মেয়র আক্কাস আলির বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে গত ২২ জুন ( শনিবার) মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। একি দিনে সাব রেজিস্ট্র অফিসের অবৈধ সমিতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের বিরুদ্ধে  সচেতন নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি ছিলো সাধারণ জনতার। সে বিক্ষোভ মিছিলে সংহতি প্রকাশ করে পৌর মেয়র আক্কাস আলী, মেরাজুল ইসলাম মেরাজসহ তার অনুসারীরা। এতে  ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে শান্ত পরিবেশে অশান্ত করার উদ্দেশ্যে  শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালায় উপজেলা আওয়ামীলীগ তথা শাহরিয়ার অনুসারীরা। পরে  আত্মরক্ষার্থে  আক্কাস সমর্থিতরা প্রতিহত করলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে  বিক্ষিপ্ত হামলায় আহত হন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল। আর ওই হামলা কে পুঁজি  করে নিজেদের হীন স্বার্থ উদ্ধারে মেয়র আক্কাসকে এক নম্বর আসামি করে ৪৬ জনসহ অজ্ঞত ২০০ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দেওয়া হয়।  ওই মামলায় পাকুরিয়া ইপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজসহ সাত জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু  সাব রেজিস্টার অফিসে অবৈধ টাকা নেওয়ার বিরুদ্ধে  অবস্থান নিয়ে হামলা মামলার শিকার হওয়া সাধারণ দলিল লেখক ও জনগণের একের পর এক অভিযোগ দিয়েও কোনো ন্যায় বিচার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলিল লোক সমিতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা। 

তাদের  দাবি, আমরা সংঘাত সংঘর্ষ চাই না। কিন্তু সাব টেস্টের অফিসের কমিটি বন্ধের আন্দোলনে হিংস্র বাঘের থেকেও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। গত শনিবার সংঘর্ষের কারণে আহত আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে কারা মেরেছে তা অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ আছে। তা দেখে সঠিকভাবে নিরপেক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে আসল ঘটনা। তাই প্রশাসনের প্রতি আকুল আবেদন, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে তদন্ত করুন। 

অপরদিকে এ বিষয়ে  শাহরিয়ার আলম অনুসারী শাহিনুর রহমান পিন্টু বলেন, আমাকে শাহরিয়ার আলম সভাপতি পদ দিয়েছে। আমি তার কথাতেই দায়িত্ব নিয়েছি। রেজিস্টি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করতে হলে অবশ্যই সমিতির মাধ্যমেই করতে হবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.