× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পরিচয়পত্র ছাড়াই বাড়ি ভাড়া, বাড়ছে অপরাধ

এনামুল হাসান, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)

২৬ জুন ২০২৪, ০৯:০৩ এএম

ছবি : প্রতিনিধি

গত ১৬ জুন কেরানীগঞ্জের কালিন্দী ইউনিয়নের ভাগনা এলাকায় নুরজাহান বেগমের তিন তলা বিশিষ্ট ভাড়াটিয়া বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নেন এক দম্পতি। পরদিন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রীকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ঘরের মেঝেতে ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যান স্বামী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই দম্পতির পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করেন। তবে তাদের প্রকৃত পরিচয় পাচ্ছিলেন না পুলিশ সদস্যরা। কেননা বাড়ির মালিক সেই ভাড়াটিয়ার কোনো তথ্য না নিয়েই তাদের বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন। এমনকি সেই ভাড়াটিয়ার নামও পর্যন্ত জানেন না তিনি। 

এমন ঘটনা প্রায় সময় ঘটছে কেরানীগঞ্জে। নতুন ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে ওইসব তথ্য থানায় জমা না দেওয়ায় কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তাদের পরিচয় পেতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। 

রাজধানী ঢাকার কাছেই বুড়িগঙ্গার তীর ঘেষে ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কেরানীগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৬০ হাজার। তবে এখানে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। কেরানীগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র কদমতলী গোলচত্বরের কাছাকাছি জিনজিরা, আগানগর, শুভাঢ্যা, কালিন্দী ও শাক্তা ইউনিয়নে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা সবচাইতে বেশি। এছাড়া ভাসমান মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে কেরানীগঞ্জ।  দিন দিন অপরাধের হার বেড়েই চলছে এ উপজেলায়। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধীদের অভয়াশ্রম। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কেরানীগঞ্জ অপরাধীদের আবাসস্থল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এখানে বাসা বাড়ি ভাড়া নিতে পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বাধ্যবাধকতা নেই। বাসা ভাড়া দেয়ার পূর্বে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই বাসা ভাড়া দিয়ে দেন। এমনকি ভাড়াটিয়ার পেশা সম্পর্কে জানারও প্রয়োজন মনে করেন না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অপরাধীরা তাদের প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে অপরাধ সংঘটিত করে অন্যত্র গা ঢাকা দেন। পরবর্তীতে সেসব অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালিন্দী এলাকার এক বাড়িওয়ালা বলেন, আমার বাসা মূল সড়কের চেয়ে একটু ভিতরে। তাই এখানে ভাড়াটিয়া তেমন পাওয়া যায়না। তাই কেউ ভাড়া নিতে আসলে মাসিক ভাড়া চাহিদা মতো পেলে অন্যান্য বিষয়গুলো লক্ষ্য করা হয়না। কিন্তু এখন থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে বাসা ভাড়া দেবো।

শুভাঢ্যা ইউনিয়নের দারুসসালাম এলাকায় একটি ভবনের মালিক গোলজার হোসেন সুমন বলেন, আমার বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া উঠার আগে তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও থানা কর্তৃক দেওয়া ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করে নিই। যদি কেউ এসব বিষয়ে অনীহা দেখান তাহলে আমরা তাদের বাসা ভাড়া দিইনা। তিনি আরও বলেন, বাসা ও সমাজের নিরাপত্তার স্বার্থে সকল বাড়ির মালিকদের তাদের ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ করে থানায় জমা দেওয়া উচিত।

জিনজিরা এলাকায় একটি বাড়ির মালিক জানান, বাসা ভাড়া দেওয়ার পর ভাড়াটিয়াদের তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি চাওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই তথ্য দিতে গড়িমসি করে। আবার অনেকে তথ্য দেন। অনেকে তথ্য দেবো, দিচ্ছি বলে সময় অতিবাহিত করেন। আমি একটি ফাইলে ভাড়াটিয়াদের সকল তথ্য, ছবিসহ লিপিবদ্ধ করে রাখি। যাতে কোন সমস্যা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ওইসব তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা যায়। 

খোলামোড়া এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের ভাড়াটিয়া আনিস(ছদ্মনাম) বলেন, আমি চার বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই বাসায় ভাড়া থাকছি। এই বাসার চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় ১০/১২ জন ব্যাচেলর থাকে। অথচ তাদের কারোরই কোন তথ্য এখন পর্যন্ত চাননি বাড়ির মালিক। পরে সেই ব্যাচেলর বাসায় গিয়ে কথা বলে জানা যায়, একজনের নামে বাসা ভাড়া নেয়া হলেও বাকি সদস্যদের কোনো তথ্য বাড়িওয়ালাকে দেয়া হয়নি।

কেরানীগঞ্জের স্কুল শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, কিছু বাড়ির অসাধু মালিক অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে ভাড়াটিয়াদের যথাযথ তথ্য তারা থানায় জমা দেননা। তারা মূলত ভাড়া পেলে অন্য বিষয়গুলো প্রাধান্য দেন না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অপরাধীরা তাদের কার্যক্রম চালান। তিনি আরও বলেন, ভাড়াটিয়াদের তথ্য থানায় জমা না দেওয়া অপরাধ। যারা এ নির্দেশনা অমান্য করেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সোহেল মোল্লা সাব্বির সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি কাজের স্বার্থে বা তদন্তের স্বার্থে পুলিশকে তথ্য দিয়ে জনগণকে সহায়তা করতে হবে। এ ধারা অনুযায়ী পুলিশ যে কারও কাছে তার কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট তথ্য চাইতে পারে। পাশাপাশি জনগণকেও পুলিশকে এ বিষয়ে সহায়তা করতে হবে। আইন অনুযায়ী কোনো পুলিশ কর্মকর্তা তথ্য চাইলে জনগণকে তা সরবরাহ করতে হবে। কেউ তা না করলে পুলিশ তাকে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারে।

বাড়ি ভাড়া দেয়ার সময় বাড়িওয়ালার করনীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) খালেদুর রহমান সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, কোন বাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া আসলে সর্বপ্রথম বাড়িওয়ালার যা করনীয় তা হচ্ছে সেই ভাড়াটিয়ার জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করা। আমাদের থানা এলাকাগুলোতে যারা বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছে তারা প্রতিটি এলাকায় ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করতে থানা কর্তৃক সিআইএমএইচ ফরম প্রতিটি বাড়িওয়ালাদের কাছে পৌঁছে দেয়। যাতে নতুন ভাড়াটিয়া আসলে সেই ভাড়াটিয়ার সকল তথ্য ফর্মে লিপিবদ্ধ থাকে। কিন্তু আমরা সিআইএমএইচ ফর্ম দিয়ে আসার পরও কিছু কিছু বাড়ির মালিক অনিহা করে তথ্য সংগ্রহে রাখেনা। ভাড়াটিয়াদের তথ্য আমাদের সার্ভারের ডাটাবেজ আকারে সংগ্রহ হচ্ছে। আমরা প্রতি মাসেই একটি হিসেব নেই যে কতগুলো নতুন ফর্ম পুরন হলো। আর এ বিষয়টি আমাদের পুলিশ সুপার মহদয় নিজেই তদারকি করেন।

তিনি আরো বলেন, কোনো বাড়িতে যদি জঙ্গিবাদসহ বড় ধরনের কোনো অপরাধ সংঘটিত হয় সেক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা যদি সেই ভাড়াটিয়ার তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তবে সেই বাড়ির মালিক অপরাধীর আশ্রয়দাতা হিসেবে মামলায় নথিভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.