সিলেটে জেলায় বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার ১২৩ জন এর মধ্যে পুরুষ ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯০, নারী ১৯ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৪ ও হিজরা ১৪৯ জন। জেলার সদর উপজেলায় বেশী লোক বসবাস করেন, সবচেয়ে কম ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়। তাছাড়া জেলার প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৪৯ হাজার ৬৬০ জন যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০১১ সালের তুলনায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে।
বর্তমানে এ জেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এ ছাড়া বেড়েছে ঘনত্বের হার। ২০১১ সালে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯৫৫ জন বসবাস করলেও ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বেড়েছে ১২২ জন।
জেলায় অবিবাহিত নারীর চেয়ে অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা বেশি। মোট অবিবাহিত সংখ্যা ৪০ দশমিক ৭৯ শতাংশ অবিবাহিত। এর মধ্যে অবিবাহিত পুরুষ আছেন ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে অবিবাহিত নারী আছেন ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। বিবাহ বিচ্ছিন্ন পুরুষ শূণ্য দশমিক ১৬ শতাংশ ও নারী শূণ্য দশমিক ৪৮ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিভাগীয় পরিসংখ্যান অফিসের উদ্যোগে আয়োজিত সিলেটের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর জেলা রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জেলা রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে বিভাগীয় পরিসংখ্যান অফিসের যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাহাবুদ্দীন সরকার সঞ্চালনায় ও জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপসচিব জেসমীন আকতার।
শহরে জনসংখ্যা বসবাসের হার বেশি
জেলার মোট জনসংখ্যার ৭৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ শহর এলাকায় বসবাস করেন ও ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ পল্লি এলাকায় বসবাস করেন। বস্তিতে বসবাস করেন ১ লাখ ০২ হাজার ৯৫৮ জন ও ভাসমান রয়েছেন ৪৭৩ জন। তাছাড়া বস্তিতে বসবাসকারী জনসংখ্যার বেশীরভাগ সিলি কর্পোরেশন এলাকায় বাস করেন।তাছাড়া ১৫ থেকে ১৯ বয়সী জনসংখ্যার হার বেশি। সিলেটে মোট খানা রয়েছে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৫৪। এর মধ্যে পল্লিতে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৪ ও শহরে ২ লাখ ৮ হাজার ৪১০টি। তাছাড়া জেলায় পুরুষ প্রধান খানার সংখ্যা বেশী, জেলার ৮১ দশমিক ৫৬ শতাংশ খানায় পুরুষ প্রধান বাকি খানাগুলোতে নারী প্রধান।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম
সিলেট জেলা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সিলেটের জনসংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার ১২৩ জন। জেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ২০১১ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর আগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০০১ সালে ১ দশমিক ৭৩ এবং ১৯৯৯ সালে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল।
১৯৮১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিলেটের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান রিপোর্টে উপস্থাপন করা হয়। এতে দেখা যায়, ১৯৮১ সালে সিলেটে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার জনসংখ্যা ছিল। এ ছাড়া ১৯৯১ সালে ২১ লাখ ৫৩ হাজার, ২০০১ সালে ২৫ লাখ ৫৬ হাজার এবং ২০১১ সালে ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার জনসংখ্যা ছিল। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৯৯১ সালে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৬১৭ জন। তা বেড়ে ২০০১ সালে ৭৩২ জন, ২০১১ সালে ৯৯৫ ও ২০২২ সালে ১ হাজার ১১৭ জনে দাঁড়ায়। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী সিলেটে মোট জনসংখ্যার ৯২ দশমিক ৫৭ শতাংশ মুসলমান ও ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ হিন্দু। বাকিরা বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
সাক্ষরতার হার বেড়েছে
সিলেটে ২০২২ সালে সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৪৩ শতাংশে। যা ২০১১ সালে ছিল ৫১ দশমিক ১৮ শতাংশ, ২০০১ সালে ৪৫ দশমিক ৪৯ ও ১৯৯১ সালে ছিল ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ । তাছাড়া সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সাক্ষরতার হার ৭৮ দশমিক ৫৮ ও শহরে ৮১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। শিক্ষার্থীর দিকে থেকে এগিয়ে রয়েছেন পুরুষরা। জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সাক্ষরতার হার সর্বোচ্চ ৮১ দশমিক ৪০ শতাংশ ও সর্বনিম্ন কোম্পানীগঞ্জে ৬১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া জেলায় ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় পড়ছেন। এর বাইরে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ ধর্মীয় শিক্ষায়, শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ কারিগরি শিক্ষায় ও ২ দশমিক ৪০ শতাংশ অন্যান্য শিক্ষায় পড়াশোনা করছেন।
বেকারের সংখ্যা বেড়েছে
তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বেকার জনগোষ্টীর সংখ্যা বেড়েছে। জেলার ৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ২৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, গৃহস্থালী কাজে নিয়োজিত ২৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, বর্তমানে কাজ খুঁজছে ২ দশমিক ১১ শতাংশ, এবং ৪৪ দশমিক ০৮ শতাংশ কোনো কাজ করছে না। এরমধ্যে পুরুষ ৮৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ ও নারী ১৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট জনসংখ্যার মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৩৭ শতাংশ। কাজে নিয়োজিতদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ সেবাখাতে, ৩৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ কৃষি এবং ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ শিল্পখাতে কর্মরত রয়েছে।
মুঠোফোন ব্যবহারকারী ৬৫.৩৭ শতাংশ
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে নিজস্ব ব্যবহারের মুঠোফোন (১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব) আছে ৬৫ দশমিক ৩৭ শতাংশের। এরমধ্যে নারী ৫০ দশমিক ৭৫ শতাংশ, পুরুষ ৮১ দশমিক ১০ শতাংশ ও হিজরা ৬৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে ৪২ দশমিক ০২ শতাংশ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্টধারী আছে ৩১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টধারী আছে ৩১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
বিদ্যুৎ–সুবিধা পান প্রায় শতভাগ
২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ মানুষ ১৯৯১ সালে বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করতেন। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ২৭ শতাংশে। এ ছাড়া ২০০১ সালে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ২০১১ সালে ৬২ দশমিক ৯২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করতেন।
কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী, সিলেটের ৩৫ দশমিক ৫৮ শতাংশই কৃষির সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাকি ৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বিভিন্ন সেবার সঙ্গে জড়িত।
তাছাড়া জেলার খাবার পানির প্রধান উৎস টিউবওয়েল, তবে এখনও অনেকে পুকুর, নদী, খাল, লেক ও কুপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন। এ জেলার রান্নার জ্বালানির প্রধান উৎস এখনও কাঠ, খড়ি ও লাকড়ি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh