কদিন আগেও ছিলো বৃদ্ধা গুলেছা বানুর চোখে কান্নার পানি৷ পেটে ক্ষুদার যন্ত্রণায় ছটফট করতে হয়েছিলো। আপন পেটের সন্তান ফেলে চলে গিয়েছে। এরপর চোখে মুখে ছিলো অন্ধকার। টানা ছয়দিন ছিলেন খোলা আকাশের নিচে।
জীবনের পড়ন্ত সময়ে এসে নির্বাক আর অসহায়ত্ব থমকে দিয়েছিলো জীবনের চাকা। মানবিক কিছু মানুষের ভালোবাসা সেই বৃদ্ধ মার মনে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখালো। চোখের পানি দূর হয়ে এলো হাসি৷
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এক বৃদ্ধা মাকে তার সন্তান রেখে চলে যায়৷ পাঁচ বছর আগে তার স্বামী বাতেন ফকির মারা যাবার পর সন্তানই তার একমাত্র ভরণপোষণের ছিলো৷ তারা ছিলেন ভুমিহীন। ইউনিয়ন কৃষি উপ-সহকারীর পরিত্যক্ত ভবনে থাকতেন তিনি। কিন্তু ছেলে মাকে সবসময়ই বোঝা মনে করতেন৷ একি ইউনিয়নের বৈরাগিচর গ্রামে ছিলো তাদের পৈতৃক বাড়ি।
ঈদের পর গত ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার মাকে আর সাথে রাখবেনা বলে ছেলে হোসেন মাকে ওই ভবনের রুম থেকে বাহিরে ফেলে এলাকা ছাড়া হয়ে যায়৷ ওদিন ভারী বৃষ্টি হলে রুমে পানি ওঠে থাকার অনুপযোগী হয়ে যায়। এরপর থেকে খাবার সংকট ও খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছিলো। বৃদ্ধার ভাই মৃত ফালু ফকির ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সংবাদ প্রকাশের পরে জানাজানি হবার পর সেই বৃদ্ধা গুলেছা বানু (৭৫) পেলো আশ্রয়।
মসূয়া ইউনিয়নের বৈরাগিচর গ্রামেরই বাদশা মিয়া বৃদ্ধা মহিলার দায়িত্ব নিয়েছেন৷ এরপর মানুষের দেওয়া সহযোগিতায় চৌকিখাট, খাবার, কাপড়, ফ্যানের ব্যাবস্থা করা হয়েছে৷ চিকিৎসাও করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে এখন তিনি কষ্ট ভুলে স্বাভাবিক হচ্ছেন৷
বৃদ্ধা গুলেছা বানু বলেন, 'যারা আমাকে আশ্রয় দিলো, তারাই আমার বাপ-মা এখন থেকে। এখন আমার কষ্ট নাই আর৷ ঈদের সময়ও ছেলে ভালো খাবার দেয়নি। এখন আমি সবকিছু পাচ্ছি।'
আশ্রয় দেওয়া বাদশা মিয়া বলেন, 'বিষয়টি জানাননি হবার পর তার এই অবস্থা দেখে সইতে পারিনি৷ বাড়িতে নিয়ে আসছি। এখন থেকে আমি দেখাশোনা করবো৷ মানুষ সহযোগিতা করছে। আরো কেউ সহযোগিতায় এগিয়ে আসলে কাজটি আমার জন্য সহজ হবে৷'
মসূয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, ছয়দিন ধরে বাহিরে পড়েছিলো মহিলাটি৷ ভরণপোষণের কেউ ছিলোনা৷ তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় নিতে রাজি হওয়ার পর আমরা কিছু সহায়তা করে তুলে দিলাম৷ খোঁজখবর ও প্রয়োজনীয় আরো সহায়তা করবো৷'