সিরাজগঞ্জে আজও বেড়েছে যমুনা নদীর পানি। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর হার্ড পয়েন্টে ০৩ সে.মি পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬১ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে জেলার কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিতে ডুবে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ফসলী জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৩৬২টি পরিবারের প্রায় ২৪ হাজার মানুষ।
ঘরবাড়ি ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। এছাড়া গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। পানি বেড়েছে অভ্যান্তরীণ নদ-নদীগুলোতে।
আগামী ৮ জুন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।গত ২৪ ঘন্টায় (শনিবার সকাল ৬টা থেকে আজ রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত) যমুনা নদীর পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত হয়ে পড়া জেলার ৫টি উপজেলার ৪৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৫শ হেক্টর ফসলি জমিসহ অসংখ্য তাঁত কারখানা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে কৃষক ও শ্রমিকেরা।
দুর্গত এসকল এলাকায় বিতরণের জন্য ইতিমধ্যেই ৯০ মেট্রিক টন চাল ও ৩শ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।অপরদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার হাট-পাঁচিল, জালালপুর ও কৈজুরীতে নদী ভাঙন অব্যাহত রযেছে। ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে কয়েকশত বসতবাড়িঘর, বিল্ডিং, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙনের মুখে রয়েছে অনেক বাড়িঘর। ভাঙনকবলিত বাসিন্দারা বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
কাজীপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী, তেকানি, নিশ্চিন্তপুর ও চরগিরিশের বিভিন্ন দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। ভাঙনের মুখে পড়েছে ছালাল চরে নির্মিত মুজিব কেল্লা। যেকোন সময় তা যমুনা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ভাঙনের কবলে পড়েছে ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। খাসরাজবাড়ী গুইজাবাড়ি বাধ, তেকানি বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। যদিও এসব বাঁধের কাজ এখনও চলমান রয়েছে।
কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহরাব হোসেন বলেন, মুজিব কেল্লার একটি অংশের ব্লক দেবে গেছে। ইতিমধ্যে বন্যা ও ভাঙন কবলিত এলাকায় জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন তারা। বানভাসিদের জন্যে ১৫ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ পেয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে চাহিদামতো এই ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের গেজ রিডার হাসান মামুন বলেন, পানি বৃদ্ধির হার অনেকটাই কমে এসেছে।সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের উজানে ভারতে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারতের আসাম মেঘালই থেকে যমুনা নদীতে পানি আসছে। এই বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী আরো দুই দিন দ্রুতগতিতে পানি বাড়তে পারে।
বন্যা তথ্য কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ৭-৮ জুলাই পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এ কারণে মাঝারি থেকে ভারি বন্যার পরিস্থিতি হতে পারে। ৮ জুলাইয়ের পর দ্রুত পানি নেমে যাবে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান বলেন, বন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৮টি, কাজীপুরে ১০টি, শাহজাদপুরে ৫টি, বেলকুচির ৪টি ও চৌহালী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৩৬২টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য ইতিমধ্যে ৯০ মেট্রিক টন চাল ও ৩শ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh