সিলেটে ও মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামা শুরু হয়েছে। নগরের কিছু এলাকায় জলাবন্ধতা থাকলেও পরিস্থিতি আগের থেকে উন্নতি হয়েছে, কমছে নদ-নদীর পানিও। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জসহ প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামা শুরু করেছে। নগরীর তালতলা, জামতলাসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনও জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে, এতে এখনও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রহিম মিয়া জানান, সামান্য পরিমাণ পানি কমেছে তবে উপজেলায় এখনও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি। এখনও রাস্তা-ঘাট, ঘর বাড়ি প্লাবিত অবস্থায় রয়ে গেছে। তবে বৃষ্টি না হলে আশা করা যায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে আমাদের দুর্ভোগের কোনো শেষ নেই। খাদ্য, পানিসহ সব ধরনের ভোগান্তিতে আমরা রয়েছি।
কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ হিমেল জানান, এখনও অনেক এলাকা প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে। তবে আগের তুলনায় কিছুটা পানি কমেছে। দীর্ঘ সময় থেকে পানিবন্দি থাকায় পরিবারের অনেকে পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি যাতায়াতসহ দৈনন্দিন কাজ করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের রবিবার (০৭ জুলাই) রাতের বন্যা পরিস্থিতির তথ্যমতে, জেলার ১ হাজার ১১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে বন্যাকবলিত হয়েছেন ৫ লাখ ৭৪ হাজার ১৫৭ জন মানুষ। জেলার ২১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯ হাজার ৬৪১ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় সিলেটে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি চারটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত কমবে। ভাটির দিকে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় নদ-নদীর পানি ধীর গতিতে কমছে। তবে গতকালের তুলনায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। নদীর আমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১৩ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। তাছাড়া লুবা, সারি, সারিগোয়াইন, ডাউকি, ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার নিচে অবস্থান করছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, জেলার কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, কিছু এলাকায় এখনও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। তবে নতুন করে বৃষ্টিপাত না হলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আমরা বন্যা পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। জেলা ও উপজেলায় পর্যায় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন ভিত্তিক মেডিকেল টিম কাজ করছে।