চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ভিখারিনী পারভীন বেগম হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) উচ্চ আদালত এই রায় বহাল রাখেন। তবে রসু খাঁর ভাগ্নে জহিরুল ও অপর এক সহযোগী ইউনুছের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজার রায় প্রদান করেন একই আদালত।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর বাড়ি চাঁদপুরের সদর উপজেলার মদনা গ্রামে। ২০০৯ সালে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পুর্বে ১১জন নারীকে চাঁদপুর সদর উপজেলায়, হাইমচর ও ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যার কথা স্বীকার করেছিল সে। তবে তার পরিকল্পনায় ছিলো কমপক্ষে ১০১জন নারীকে সে ধর্ষনের পর হত্যা করবে। ঘটনার শিকার ১১জন নারীই মধ্যে ১০জনই ছিলেন গাজীপুর জেলার বিভিন্ন গার্মেন্টসের কর্মী এবং বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। শুধুমাত্র পারভীনের বাড়ি ছিলো চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের পালতালুক গ্রামে। বিধবা পারভীন তার তিন সন্তানকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতো।
যেভাবে পারভীনকে ফাঁদে ফেলে হত্যা করে
এক সময় একটি গরুর বাছুর চুরি করে বিক্রি করতে না পেরে ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলী এলাকায় একজনের কাছে বাছুরটি বর্গা দেয় রসু খাঁ। এরপর মাঝে-মাঝে বাছুরটি দেখার জন্য কড়ৈতলী গ্রামে যাতায়াতের পথে ভিখারিনী পারভীনের সাথে তার পরিচয়ের সূত্র ধরে পারভীনকে বোন ডেকে তার বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকে সে। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে পারভীনের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে রাজধানী ঢাকার কোনো এক বাসায় দারোয়ানের চাকুরী পাইয়ে দিবে বলে প্রলুব্ধ করে। পারভীন রসুর এমন প্রস্তাবে প্রলোভিত হয়ে ছেলেকে ঢাকাতে পাঠাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তানুযায়ী ছেলের নতুন জামা-কাপড় ক্রয় করতে হবে বলে রসুকে জানায়। রসুর পরামর্শ অনুযায়ী পারভীন পাশ^বর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর বাজারে অবস্থিত একটি সমবায় সমিতি থেকে কিছু টাকা ঋণ উত্তোলন করে। টাকা উত্তোলনের পর রসুর পরামর্শে ছেলের জামা-কাপড় ক্রয় করতে উভয়ে পারভীনের বাড়ী থেকে বের হয়। এরপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের হাঁসা এলাকায় রসু খাঁ পারভীনকে ধর্ষনের পর হত্যা করে ঐ এলাকার এ-সিক্স খালে পরভীনের লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
যেভাবে পুলিশের হাতে আটক রসু খাঁ
পারভীনকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় নতুন ফন্দি আঁটে রসু খাঁ। পুর্ব শত্রুতা উদ্ধারের জন্য মদনা এলাকার জনৈক সফিক ও লোকমানকে ফাসানোর চেষ্টা করতে থাকে সে। ঘটনার একদিন পর স্থানীয়রা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পারভীনের লাশ উদ্ধার করে। এসময় রসু খাঁ একটি মুঠোফোনে পুলিশকে ফোন দেয়। ফোনে সে নিজের বাড়ি সিলেট জেলায় তার নাম লেবু মিয়া ও রিক্সাচালক হিসেবে পরিচয় দেয়। আরো জানায়, ঘটনাস্থলের পাশে ভাটিয়ালপুরে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করে সে। পুলিশ যে লাশ উদ্ধার করেছে ঐ নারী দুইদিন পুর্বে মদনা এলাকার সফিক ও লোকমানের সাথে তার রিক্সায় চড়ে হাঁসা এলাকায় যায়। লাশ উদ্ধারের সময় চেহারা দেখে মনে হয়েছে ঐ নারীর লাশ। এঘটনার সাথে মদনা এলাকার সফিক ও লোকমান জড়িত থাকতে পারে। পুলিশ মদনা এলাকার সফিক ও লোকমানকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো তথ্য পায়নি। কিন্তু পুলিশকে ফোন করার পর থেকে মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেয় সে। এর কিছুদিন পরেই উপজেলার গাজীপুর বাজারের একটি মসজিদের সিলিং ফ্যান চুরি করতে গিয়ে এক সহযোগিসহ স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে জেল হাজতে যায় সে। ধরা পড়ার সময় স্থানীয় একজন রসুর একটি মুঠোফোন রেখে দেয়। মুঠোফোনটি ছিলো একটি বাটন সেট ও প্লাস্টিকের কভার দিয়ে মোড়ানো। প্লাস্টিকের কভারের ভিতরে আবার কাগজ দিয়ে মোড়ানো দুটি সীম ছিলো। যার মধ্যে একটি পুলিশকে তথ্য প্রদান করা সীম। ওই ব্যক্তি কিছুদিন পর কাগজে মোড়ানো একটি সীম অপর একজনের কাছে বিক্রি করে দেয়। সীম ক্রয়কারী লোকটি সীমটি ব্যবহার শুরু করে। ওদিকে, পারভীন হত্যা রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে পুলিশ কিছুদিন পরপরই তথ্য দেয়া ব্যক্তির নাম্বারে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকে। এক সময় সীমটি ব্যবহারকারীকে ও পরে ঘটনাক্রমে পুলিশ শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে জেল হাজত থেকে রসুকে আটক করে। জেল হাজত থেকে শ্যোন এরেস্ট হিসেবে আটক করার পরই ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এক এক করে ১১জন নারীকে পাশবিক নির্যাতনের পর নির্মমভাবে হত্যার রহস্য। এরপরেই পুৃলিশ অন্যান্য হত্যকাণ্ডের সাথে জড়িত হিসেবে তার ভাগ্নে জহিরুল ও ইউনুছকে আটক করে।
এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ফরিদগঞ্জের ভিখারিনী পারভীন বেগম হত্যা মামলায় সিরিয়াল কিলার রসু খাঁকে ফাঁসির রায় প্রদান করে আদালত। পরে মঙ্গলবার (০৯) জুলাই উচ্চ আদালতও রসু খাঁর ফাঁসির রায় বহাল রাখেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh