ভারতের সীমান্তবর্তি লালপুর ও বাঘা চারঘাট। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর সঙ্গে উপজেলা দুটির যোগাযোগের মাধ্যম সড়ক ও নদীপথ। পদ্মানদী উপজেলার দুটি তীরবর্তি হওয়ায় ভারত থেকে নদী পথে লালপুর, বাঘা চারঘাট হয়ে বিভিন্ন মাদক ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইন ও ইয়াবা আসছে ঈশ্বরদীতে।
এছাড়াও ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ঈশ্বরদীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকার রেলপথ সংযোগ রয়েছে । যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়া দেশের কক্সবাজার, টেকনাফসহ মাদক স্পট থেকে ইয়াবা, হেরোইন, কোকেন আসছে ঈশ্বরদীতে। তাই মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে ২৪৬ দশমিক ৯০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ঈশ্বরদী উপজেলার ৩১ দশমিক ১০ বর্গ কিলোমিটারের ঈশ্বরদী পৌরসভায় বসবাসকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা।
মাদক ব্যবসা করে ঈশ্বরদী পৌরসভার পিয়ারাখালি কাচারিপাড়া (ব্লাকপাড়া), ফতেমোম্মাদপুর লোকোসেট, এমএস কলোনির তিন তলা মোড়,সরকারী কলেজপাড়া, শেরশাহ রোড ও আলহাজ্ব রিফুজি ক্যাম্পের বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ী হয়েছেন কোটিপতি। বাস করেন বিলাস বহুল বাড়িতে। চড়েন দামী গাড়িতে।
কয়েকজন আবার মাদক ব্যবসার পাশাপাশি অন্য ব্যবসাও খুলেছেন। দুই একজন জনপ্রতিও নির্বাচিত হয়েছেন। এসব মাদক ব্যবসায়ী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৭-৮ টি করে মাদক মামলাও রয়েছে। জেল হাজতেও গেছেন। তারপরও থেমে নেই তাদের মাদক ব্যবসা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী শহরেই তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের সংখ্যা প্রায় ৩৪ জন। শহরেই প্রায় দেড় শতাধিক মাদকস্পট রয়েছে। এরমধ্যে অরণকোলা গরুহাট পাড়া, ভাঁটাপাড়া, মোকারামপুর, ফতেমোহম্মাদপুর, তিন তলা মোড়ে, বাইপাস ডবল রেল লাইন মোড়, আমবাগান, শেরশাহ রোড বেলতলা, বকুলের মোড়, কলেজ মোড়, সদর হাসপাতালের পেছন, কদম তলা মোড়, আলহাজ্ব ক্যাম্প পাড়া, খায়রুজ্জামান বাস টার্মিনাল, ব্লাক পাড়া, কাচারিপাড়া (হেরোইনপট্টি), রহিমপুর শৈলপাড়া,পিয়ারপুর, পিয়ারপুর, সাঁড়া গোপালপুর তালতলামোড়, তিন কোনা পুকুরপাড় উল্লেখ যোগ্য।
আর মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন দলীয় প্রভাবশালী নেতারা, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবার, শিল্পপ্রতিষ্টানের মালিকরা। ইতিপূর্বে ঈশ্বরদীর এক প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী আলিয়া ভুলুকে ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হয়। ঈশ্বরদীর কয়েকটি প্রভাশালী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করারও ঘটনা রয়েছে। তবে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নানা চাপে ও নানা সুত্রে যোগসাজস মাসোয়ারা চুক্তি রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের।
স্থানীয়, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ঈশ্বরদী থানা সুত্র মতে, শহরের পিয়ারাখালি কাচারিপাড়ার (ব্লাকপাড়া) আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলী বাবু ওরফে বরকি বাবু। তার নামে ২০১১ সাল থেকে এই পর্যন্ত মাদক মামলা হয়েছে ৯ টি। তার ছেলে মোঃ সুমন শেখের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী থানায় ৪ টি ও পাবনা সদর থানা মিলে ৫টি মামলা রয়েছে। বরকি বাবুর স্ত্রী স্বরবানী ওরফে বাচার নামে একটি মাদক মামলা রয়েছে। বরকি বাবুর মেয়ের নামেও মামলা রয়েছে।
এই পরিবারটি হেরোইন ব্যবসায় ঈশ্বরদীসহ আশেপাশের এলাকার মধ্যে সেরা। তার বাড়ি থেকে কোটি টাকার হেরোইন ও সোনা চোরাচালানকারী সদস্যদেরও আটক করা হয়েছিল।
সুত্রগুলো মতে, শহরের ফতেমোহাম্মাদপুর লোকোসেড এলাকার মৃত পিয়ারুর ছেলে নাদিম ও বেদিন সোহেল, নুরুর ছেলে উজ্জ্বল ওরফে ইনটেক উজ্জ্বল, আব্দুল করিমের ছেলে আরিফ, আসলাম খার ছেলে একরাম খা, তিন তলা এলাকার আসাদুলের ছেলে পিন্টু, শেরশাহ রোডের কামরুদ্দিনের ছেলে আফতাব আলীসহ বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই একাধিক মাদক মামলার আসামী।
শহরের পিয়ারাখালি কাচারিপাড়ার (ব্লাকপাড়া) আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলী বাবু ওরফে বরকি বাবুর ছেলে মোঃ সুমন শেখ বলেন, আমরা কেউ মাদক ব্যবসা করি না। তবে তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা এতগুলো মাদক মামলার আসামী কেন সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সুমন শেখ।
ঈশ্বরদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঈশ্বরদীর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা সব সময় মাদক দ্রব্যের বিষয়ে কঠোর। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারে স্বোচ্চার। প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারিদের আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে।
আমাদের দুই একজন কর্মকর্তাদের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেনদেন থাকতে পারে। তাদের নজরদারীদের রাখা হয়েছে দাবী করে তিনি আরও বলেন, মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় ঈশ্বরদীকে সম্মেলিতভাবে মাদক মুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এমপি মহাদয়। আমরা এখন তাঁর নির্দেশনামতে কাজ শুরু করেছি।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিষয়ে আমরা সব সময় জিরো টলারেন্সে আছি। থানার কোন কর্মকর্তার মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এমপি মহাদয়ের নির্দেশনার পর মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের গতি আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে স্বস্তিতে পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারবো। মাদক মুক্ত করতে চিরুনি অভিযান শুরু করা হয়েছে।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) সংসদ সদস্য গালিবুর রহমান শরীফ বলেন, সম্মিলিতভাবে যেকোন মুল্যে ঈশ্বরদীকে মাদক মুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা সভায় স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারী কে কোন দলের এবং কোন পরিবারের তা না দেখে ও দলীয় কোন নেতা বা জনপ্রতিনিধির সুপারিশ না শুনতেও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই মাদক মুক্ত ঈশ্বরদী।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । সম্পাদক: 01703-137775 । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh