'সোনালী আঁশে ভরপুর ভালোবাসি ফরিদপুর' জেলা ব্র্যান্ডিং স্লোগানের সার্থকতা এবছর ফুটে ওঠেনি অধিকাংশ জমিতে। চলতি বছরে এ জেলায় লক্ষাধিকের অধিক কৃষক চাষাবাদ করেছে পাট।
ফরিদপুরের গুণগত ও মানসম্মত পাট উৎপাদন হয় যা সারা পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও অনাবৃষ্টির সাথে তীব্র ক্ষরার কারণে পাটের ফলন ভালো না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে চাষিরা।
গত কয়েক বছর পাট চাষে লাভের মুখ দেখলেও এবার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় তাদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। কারণ সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ও তীব্র ক্ষরার কারনে পাট গাছের বৃদ্ধি কমে গেছে এবং পোকার আক্রমণ বেড়ে যাওয়া।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় দুই জাতের (তোস এবং মাস্তে) পাটের আবাদ হয়েছে। এবছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৯শ টন।
লক্ষ্যমাত্রার থেকে কম পাটের আবাদ হয়েছে এবার। তারপর বৃষ্টি কম হওয়া, পাটের পাতা পোড়া রোগ ও পাট জাগ দেওয়ার সমস্যা ভোগাচ্ছে চাষিদের। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, সামনের কয়েক দিন আরও বৃষ্টি হবে, তখন এ সমস্যা কেটে যাবে।
ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের পাটচাষি মান্নান মোল্লা (৬৪) বলেন, এবার চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। চাষের প্রথম দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়। জমিতে সেচ দিয়ে পাটবীজ বপন করতে হয়েছে। শুরু থেকেই রোদ আর অনাবৃষ্টির কারণে খরচ বেড়েছে। এখন খরচের টাকা ওঠানোই কষ্টসাধ্য। তবে পাটের দাম বেশি পেলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠবে।
একই উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের আরেক কৃষক মো. হাশেম মোল্লা (৬৮) বলেন, জমির পাট পরিপক্ব হয়েছে। কিন্তু খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি এখনো আসেনি। কীভাবে জাগ দেবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এবার এক একর জমিতে পাট আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকার মতো। অন্যবার পাট উৎপাদন হয় একর প্রতি ২০-২৫ মণ। কিন্তু এবার উৎপাদন হতে পারে ১৫ মণের মতো। এরপর কৃষি শ্রমিকের মজুরি ও সার-কীটনাশকের দাম বাড়ায় খরচও বেশি হয়েছে। ফলন ভালো না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস সংবাদ সারাবেলা কে বলেন, ভাঙ্গা উপজেলায় পাটের আবাদ গত বছরের তুলনায় কম হয়েছে। চলতি বছরে ভাঙ্গা উপজেলায় পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ১০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৯৯৭০ হেক্টর। এ পর্যন্ত কর্তন করা হয়েছে ৫০% পাট। প্রচণ্ড খরার কারণে জমিতে বাড়তি সেচ দিতে হয়েছে। পাট উৎপাদনে এবার যে খরচ তাতে ন্যায্যমূল্য পেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
এ বিষয়ে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা মূলত বৃষ্টির ওপরে নির্ভর করেই প্রাকৃতিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাটের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু এবছর প্রায় ৩০-৪০ দিন টানা বৃষ্টিহীন ছিল জেলা। তীব্র গরম ও ক্ষরা ছিল। এ কারণে ফরিদপুরের কৃষকদের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ জমিতেই সেচ দিতে হয়েছে। যারা সেচ দিয়ে চাষ করেছেন তাদের ফলন ভালো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাটকাটা এখনো পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় ফলন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাটচাষিরা এটা ঠিক। তবে দাম ভালো পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন পাট চাষিরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । সম্পাদক: 01703-137775 । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh