প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পরই গা ডাকা দেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও ডজনখানেক কাউন্সিলর। এতে করে বিঘ্নিত হচ্ছে নানা নাগরিক সেবা। সোমবারের পর থেকে সিসিক কার্যালয়ে অফিস করছেন না মেয়র। বেশিরভাগ কাউন্সিলর অফিস রয়েছে বন্ধ। এতে প্রত্যয়নপত্রসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিসিকের মেয়র রবিবারের পর অফিসে আসেননি। বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসও বন্ধ রয়েছে। এতে নাগরিকরা সেবা নিতে কাউন্সিলরদের অফিসে গেলেও ফিরে আসতে হচ্ছে। এদিকে সোমবারের পর থেকে নগরের পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও কাজে যোগ দেননি। এতে নগরজুড়ে ময়লার ভাগাড় সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ০৭ আগস্ট সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর হস্তক্ষেপে তারা কাজে যোগ দেন। এসময় আরিফ পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বলেন ‘আপনারা কাজে ফিরে আসুন। নগরবাসী আপনাদের পাশে রয়েছেন। পাশাপাশি বিএনপি নেতা-কর্মীদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর আহ্বান জানান।
সরেজমিনে নগর ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের তৃতীয় তলার কক্ষে নেই মেয়র। যে কক্ষ প্রতিদিন মানুষ ভিড় জমাতেন সেখানে এখন জনশূন্য অবস্থায় রয়েছে। কয়েকঘণ্টা অপেক্ষা করলেও নগর ভবনে কোনো কাউন্সিলরের দেখা পাওয়া যায়নি। অথচ একটা সময় তাদের পদচারণায় মুখর ছিল ভবনটি। সিসিকের বিভিন্ন শাখা ঘুরে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করলেও লোকসমাগম ছিল অল্প। বিশেষ কাজ ছাড়া কাউকে আসতে দেখা যায়নি। ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে লাইসেন্স শাখা; সেখান থেকে প্রতিদিন দুই-তিনশ মানুষ সেবা নিতেও গত কয়েকদিন থেকে সেখানেও কমেছে সেবাগ্রহীতাদের সংখ্যা। একই অবস্থা জন্ম নিবন্ধনসহ অন্যান্য শাখাগুলোতে। তৃতীয় তলার জন্ম নিবন্ধন শাখাতে গিয়ে যায় সার্ভার না থাকার কারণে কর্মরতরা অলস সময় পার করছেন। সেখানেও সেবা গ্রহিতাদের উপস্থিতি ছিল কম।
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন নিয়ে গত এক সপ্তাহ থেকে ঘুরছেন উজ্জন মিয়া নামে এক ব্যক্তি। সোমবারও তিনি জন্ম নিবন্ধন শাখাতে আসলে কর্মরতরা সার্ভার নেই জানান। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ থেকে নতুন জন্ম নিবন্ধন করার জন্য আবেদন করেছি তবে এখনো সেটি হাতে পাইনি। আমি প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট দিয়ে আবেদন করেছি এবং তাদের শাখাতে এসে জমা দিয়েছি। যখন এখানে আসি তারা বলেন সার্ভার নেই কাজ হয়নি আগামীকাল আসতে। এভাবেই গত এক সপ্তাহ থেকে চলছে। কবে সার্ভার চালু হবে তাও তারা বলতে পারছেন না। এদিকে জন্ম নিবন্ধন করতে না পারায় আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারছি না। জন্ম নিবন্ধন শাখাতে আসা একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তারাও এমনটাই জানান।
একাধিক সেবাপ্রত্যাশী অভিযোগ করে বলেন, প্রত্যয়নপত্রের জন্য কাউন্সিলর অফিসে গেলেও তাদের অফিসে তালা ঝুলানো। ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করলেও সেটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজই করা যাচ্ছে না।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের সকল বিভাগের কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে। সিসিকের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়মিত অফিস করছেন। সেবাগ্রহীতাদের সকল প্রকার সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জন্ম নিবন্ধনসহ সকল শাখা চালু রয়েছে। অনেক কাউন্সিলর নগর ভবনে এসেছিলেন তাদের সাথে কথা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেবা পাননি এমন কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। যদি এমন কেউ থাকে তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে সিসিক মেয়র স্বাক্ষর করছেন। তিনি সিলেটেই অবস্থান করছেন।
জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছেন কিনা জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে সার্ভার জনিত কারণে কিছু জটিলতা রয়েছে। বেশিরভাগ সময় সেবাগ্রহিতারা জন্মনিবন্ধন আবেদন করতে পারছেন না এরকম অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের কার্যালয়ে গত ১১ দিনে ১০-১২ টি আবেদন জমা হয়েছে। আগে প্রতিদিন ৫০-১০০টি আবেদন জমা পড়ত। তাছাড়া জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের কার্যক্রম জেলা প্রশাসক কার্যালয় করে সম্পাদন করা হয়ে থাকলেও সেই কার্যক্রমের কোনো অগ্রগতি নেই।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ সময় সার্ভার থাকে না। একটি জন্ম নিবন্ধন অনুমোদন করলে আরেকটি করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হচ্ছে। বর্তমানে আমরা এভাবেই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমাদের কর্মকর্তাচারীরা নিয়মিত অফিস করছেন।
এ বিষয়ে জানতে সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।