× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে সিলেটে চলছে পাহাড় কাটা

মাহমুদ খান, সিলেট প্রতিনিধি।

২০ আগস্ট ২০২৪, ১৫:২৭ পিএম

ছবিঃ মাহমুদ খান

পাহাড়–টিলা কাটা রোধে প্রশাসন সার্বক্ষণিক তদারকির নির্দেশ প্রদান করা হলেও থেমে নেই কার্যক্রম। নির্দেশনার পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও থেমে থেমে শুরু হয়েছে পাহাড়-টিলা কাটার হিড়িক। এসব পাহাড়-টিলা কাটার নির্দেশনায় রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দিনে-দুপুরে পাহাড়-টিলা কাটা হলেও দেখার যেন কেউ নেই।

সিলেট জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, সিলেট বিভাগের চার জেলায় বর্তমানে ১ হাজার ৮৭৫টি টিলা আছে। এসব টিলার আয়তন ৪ হাজার ৮১১ একর। চলতি বছর ও গত তিন বছরে ২৫টি মোবাইল কোর্ট ও ৮১টি এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে ৩ কোটি ১৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৩ টাকা অর্থদণ্ড ও ক্ষতিপূরণ আরোপ করা হয়েছে। এসব অভিযানে ২১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
এসব কিছুর পরও থামছে না টিলা কাটা বিগত বছরগুলোতে বেশিরভাগ টিলা কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। অর্ধেকেরও বেশি টিলা এখন অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।

গত শুক্রবার সরেজমিনে নগরীর বালুচর, আখালিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এসব স্থানে যে টিলা রয়েছে বেশিরভাগ টিলার অর্ধেক কেটে নেওয়া হয়েছে। এসব টিলা কেটে নিচেই নির্মাণ করা হচ্ছে ঘর। এসময় কোন শ্রমিক বা মালিক দাবি করা কাউকে না পেলেও টিলার সম্মুখে একটি সাইনবোর্ড সাটানো দেখা যায়। আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা হলেও তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি। এরমধ্যে অনেকে জানান, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই এই কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রতিনিয়ত টিলা কেটে যাচ্ছেন। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে তারাও এসব কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন বলে তারা জানান। একই ভাবে নগরের ব্রাহ্মণশাসন, মোহাম্মদীয়া, খাদিমনগরসহ আশপাশের এলাকাগুলোর টিলা অবাধে কাটা হচ্ছে।

সাইনবোর্ডে সাটানো মালিকের মুঠোফোনে কল দিলে উনার সম্পর্কে মামা দাবি করা ব্যক্তি বলেন, যিনি এই টিলার মালিক মো. রাজ্জাক আহমেদ তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী। বর্তমানে এই টিলা কাটা হচ্ছেনা বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ২০২২ সালে পূর্বের চেয়ারম্যান মোছাব্বির কাছ থেকে এই টিলা ক্রয় করেছিলেন রাজ্জাক আহমেদ। এরপর থেকে টিলা কাটা হচ্ছেনা। 
এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৬ সালে ভূমির মাঠ জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের ছয়টি উপজেলায় ১ হাজার ২৫টি টিলার অস্তিত্ব রয়েছে। এর বাইরে বেশ কিছু টিলা রয়েছে। এসবের মধ্যে শতাধিক টিলা পুরোপুরি বা আংশিক সাবাড় হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী (কিম) বলেন, সিলেটের পাহাড়-টিলা রক্ষায় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। দায়িত্বশীলদের অনেকেই পাহাড়-টিলা রক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করেন না। তাই কোনোভাবেই টিলা কাটা থামানো যাচ্ছে না। টিলা কাটার সাথে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  জনপ্রতিনিধি বা যারা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি তাঁরা টিলা সংরক্ষণে ভূমিকা রাখার কথা, সেখানে তাঁরা টিলা কেটে ধ্বংস করছেন। তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক খাদিজা ইয়াসমিন বলেন, টিলা কাটার ফলে মাটির উপরের স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, মাটির উপরের স্তরটি সাধারণত পুষ্টি সমৃদ্ধ হয়, যা কৃষি জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয় এবং ফসল উৎপাদন কমে যায়। টিলা কাটা বনাঞ্চল ধ্বংস করে, যা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ায়। বনাঞ্চল কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে, যা জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। টিলা কাটার ফলে এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ায়। টিলা কাটা জলাধার ও নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, যা জল সংকটের কারণ হতে পারে। টিলা কাটার ফলে সৃষ্ট মাটি ও পাথরের ধ্বংসাবশেষ জলাধারে জমা হয়, যা জলাধারের ধারণক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে স্থানীয় জনগণের জন্য জল সংকট দেখা দেয়। টিলা কাটার ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ে, কারণ অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল হারায়।

টিলা কাটা রোধে করণীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন,  টিলা কাটা বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং যারা আইন লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের মধ্যে টিলা কাটার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। স্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালানো যেতে পারে । টিলা কাটা রোধে নিয়মিত তদারকি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক একেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, টিলা কাটা আমাদের যেকোনো ভাবে হোক না কেন রুখতে হবে। আমরা যেখানেই এমন সংবাদ পাই সেখানেই অভিযান পরিচালনা করি। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হচ্ছে। সেসব এলাকায় টিলা কাটা হচ্ছে সেসব এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।

জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, কয়েকদিন পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ ছিল, সে সুযোগ নিয়ে টিলা কাটা চক্র তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। আরেকটি বিষয় যারা এই কাজ করে তারা রাতের আধারে করে থাকে। আমরা যখন অভিযান পরিচালনা করি তখন তারা আগে থেকেই খবর পেয়ে সতর্ক হয়ে যায়, ফলে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের পাওয়া যায় না। আমরা এ বিষয়ে সভা করেছি টিলা কাটার যে চক্র রয়েছে সেই চক্রকে আমরা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমি চাচ্ছি মূল হোতাকে খোঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে। বিষয়টি আমরা সেনাবাহিনীকেও জানিয়েছি তারাও এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। টিলা কাটা রোধে আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । সম্পাদক: 01703-137775 । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.