রংপুর নগরীর সবচেয়ে বড় ময়নাকুটি হিমাগারে প্রাণ,লেইচ, মেরিডিয়ানসহ একাধিক কোম্পানির যাতাকলে অসহায় হয়ে পড়েছে আলু উৎপাদনকারী কৃষকসহ ছোট ও মাঝারি মাপের আলু ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট তথ্য সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ৮নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ময়নাকুটি হিমাগারে পর্যাপ্ত ধারন ক্ষমতার এক -তৃতীয়াংশই আলু থাকে প্রাণকোম্পানির দখলে। ফলে ছোট ও মাঝারি মাপের আলু ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতির শিকার। এছাড়াও এই হিমাগারে পরিমাপের তুলনায় রাখা হয় পর্যাপ্ত আলু। যার ফলে একাধিক মজুদে আলুতে ধরেছে পচন।
হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা ভুক্তভোগী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হাবিব মিয়া, আনোয়ারুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, মিজানুর প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের অনেক বড় কোম্পানি প্রাণ,লেইচ, মেরিডিয়ানসহ একাধিক কোম্পানির লোকজন কৃষকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ কমদামে আলু ক্রয় করে হিমাগারগুলো দখল করে রাখে। তাদের টাকার কাছে অসহায় সাধারণ কৃষকেরা। এ কারণেই স্থানীয় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাদের আলু রাখার জায়গা সামান্য পেলেও তাদের আলুতে ধরছে পচন।
এতে আশানুরূপ আলু বাজারজাত করতে পারছেন না খুদে ব্যবসায়ীরা। আর এই সুযোগে বড় বড় কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে ইচ্ছাকৃতভাবে চাহিদার তুলনায় অধিক আলু আটকে রেখে বাজারে সংকট তৈরী করছে। যার ফলশ্রুতিতে বাজারে আলুর আগুন দামে ভোগান্তি জনসাধারণের।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ তারা রোদ বৃষ্টি উপেক্ষার মধ্য দিয়ে কষ্ট করে আলু উৎপাদন করেন। প্রতি বছর আলু সংরক্ষণের জন্য বড় বড় কোম্পনির দখলে থাকে হিমাগার। এতে করে নানামুখী সমস্যায় অসহায় হয়ে পরে কৃষক ও আলুব্যবসারী। ময়নাকুটি হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা ৫ লাখ থাকলেও সেখানে বঞ্চিত কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। প্রাণ কোম্পানির দখলে পায় দেড় লাখ বস্তা। আর এই বৈষম্য তৈরি করে হিমাগার কর্তৃপক্ষ।
হিমাগার নিয়ে শুধু ছোট-বড় ব্যবসায়ীদেরই অভিযোগ নয়। দৈনিক কাজ করা দিনমজুরদেরও রয়েছে নানা অভিযোগ৷ পেটের দায়ে কাজ করা নারী শ্রমিক আয়না, আমেনাসহ বেশকয়েকজন নারী বলেন, সকাল থেকে কাজ করি কিন্তু বর্তমান বাজারে এই ২৫০-৩০০ টাকা কিছুই না। আলুর দাম বাড়ছে কেজি ৬০ টাকা বাড়ে নাই শুধু আমাদের কাজের দাম। এত আলু পচে একটা আলু আমরা খাইতে পারিনা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেশকয়েকজন শ্রমিক বলেন,আগের চায়া আলুর দাম বাড়ছে, কিন্তু হামার কামের দাম বাড়ে নাই। বড় বড় কোম্পানি টাকার জোরে কৃষকের মাঠ থাকি আলু সাফ করি ফেলাইছে। এ্যালা সেই আলু হিমাগারে পচে। তাও একটা আলু হামরা পাইনা। বস্তাপতি ২১ টাকা করি দিন হাজিরা পাই তাকে দিয়া চলে না হামার সংসার। বড় বড় কোম্পানির সিন্ডিকেট না ভাঙলে আলুর বাজার ঠিক হবার নায়৷
প্রতিবছর আলুর মৌসুমে অর্থের জোরে অধিক আলু মজুদ করে হিমাগারগুলো। উৎপাদনের খরচ তুলতে তাদের জিম্মি অসহায় কৃষক। এই সিন্ডিকেটের ফলে বাজারে আগুন দামে আলু কিনতে কপালে ভাঁজ পরে ক্রেতাদের।