'গত ১৫ বছর হাসিনা অনেক মানুষ হত্যা করেছে। শেষ মুহুর্তে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষন করিয়েছে সৈরাচার হাসিনা। আমরা ১৫ বছরে পারিনি ভোট ডাকাত হাসিনাকে হটাতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হাসিনার বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে দেশকে মুক্ত করেছে। ফ্যাসিষ্ট হাসিনা আজ ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। যারা শহীদ হয়েছে তারা নিজের স্বার্থে আন্দোলন করেনি, তারা দেশের স্বার্থে আন্দোলন করেছে জামায়েতে ইসলামী দলটি সবসময় নিহতের পরিবারের পাশে থাকবে।' বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঝালকাঠি জেলা কতৃক আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান ও ছাত্র জনতা ঐক্য সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার একথা বলেন।
মঙ্গলবার (২৭ আগষ্ট) সকাল ৯ টায় ঝালকাঠি শিল্পকলা একাডেমীর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জামায়াত ইসলামীর শীর্ষ এই নেতা আরো বলেন, 'গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে যত জঞ্জাল জমেছে সেইসব জঞ্জাল পরিপুর্ণ ভাবে পরিষ্কার করে তারপর দেশে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের যতদদিন লাগবে ততদিন আমরা ধৈর্য ধরবো। সৈরাচার হাসিনার পতনের ৪ দিন আগে জামায়াত ইসলামী দলটিকে নিষিদ্ধ করেছিলো, কিন্তু হাসিনার ইচ্ছা আল্লাহ পুরণ করতে দেয়নি। শেখ হাসিনার বুলেটের আঘাতে যারা মারা গেছে তাদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। যুগ যুগ ধরে বিশ্ববাসী তাদের আলোচনায়, দোয়ায় ও স্মরনে রাখবে।'
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ঝালকাঠি জেলা শাখার আমীর অ্যাডভোকেট মো. হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বরিশাল অঞ্চল পরিচালক অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল। বক্তৃতা করেছেন ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেনসহ অনেকে।বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর ঝালকাঠি জেলা নেতৃবিন্দ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঝালকাঠির যারা শহীদ হয়েছেন সেইসব শহীদ পরিবারের মাঝে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
অপরদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ঝালকাঠির রাজাপুরে উপজেলার মেডিকেল মোড়ে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাপ পরওয়ার বলেছেন, জামায়াত নিষিদ্ধ করায় আল্লাহতালা হাসিনাকেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ছাত্রসহ অনেকেই স্বপ্নের দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে জীবন দিয়ে শহীদ হয়ে গেছে কিন্তু নতুন স্বপ্নের দেশ দেখে যেতে পারেননি। নিরাপত্তা শান্তি সুখের দেশ গড়ার যে স্বপ্ন তারা দেখেছিলো। শহীদদের সেই সেই ঐতিহাসিক স্বপ্ন ও রক্তের ঋণশোধ করার জন্য অন্তবর্তীকালিন সরকারের দায়িত্বে দেশকে স্থিতিশীল করে অবাদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা পর্যন্ত এ সরকারকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। অস্থিরতা অরাজকতা ও নৈরাজ্যে সৃষ্টির চক্রান্ত এখনও দেশে চলছে, অরাজকতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। জামায়াতে সেক্রেটারী বলেন, এ রক্ত ঝরা ইতিহাস জাতির জন্য যুগযুগ ধরে মাইল ফলক হিসেবে থাকবে। জাতি এটা দিয়ে শিক্ষা নিবে শেখ হাসিনা কিভাবে হায়েনার মতো মানুষের উপর নির্যাতন, নিষ্পেশন, শোষন চালিয়েছিলো। গুম, খুন, অপহরণ, আয়নাঘরের মাধ্যমে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিলো হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। সেই গণ অভিশাপে এবং আন্দোলনের মুখে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, দেশের ক্লান্তি লগ্নে ছাত্ররাই তাজা রক্ত দিয়ে দ্বিতীয়বারে দেশ স্বাধীন করেছে। আমরা ওই সব শহীদ পরিবারের পাশে আছি। যারা সন্তান হারিয়েছে, স্বামী হারিয়েছে, ভাই হারিয়েছে তাঁরা হাহাকার না করে মৃত্যু অনিবার্য সেটা মানতে হবে। বুকের কষ্টকে পাথর চাপা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। যাতে শহীদদেরকে আল্লাহ জান্নাতের উচ্চমাকাম দান করেন। আপনারা (অভিভাবক) সৌভাগ্যবান, আপনার সন্তানরা শাহাদাত বরণ করেছেন। আপনিও গর্বিত শহীদ পরিবারের সদস্য।