কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ৫নং কেরণখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সুমন ভূইয়া’র বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ সহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় জন্ম নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সরেজমিনে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে এবং ইউপি ভবন সংলগ্ন পুরো এলাকায় ইট, বালি, কংক্রিট, স্ল্যাব, ট্রাক্টরসহ নির্মাণ সামগ্রী স্তুপাকারে রেখে চেয়ারম্যানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বানিয়ে রাখা হয়েছে। ইউপি কার্যালয় থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হতো নির্মাণ কাজ। ইউপি কার্যালয়ের একটি কক্ষে টর্চারসেল বানিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। তার বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হতো।
ওই ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের মো. জামাল অভিযোগ করেন- তার ছেলেকে তুলে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে এক দিন, এক রাত রেখে ইউএনও কে দিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। এমন বহু ঘটনার অভিযোগ রয়েছে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
এদিকে আল-আমিন, আ. মতিন ও নাঈম সহ অসংখ্য সেবাগ্রহীতা অভিযোগ করেন- জন্মনিবন্ধন ও আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য গত ৩-৪ মাস ধরে নিয়মিত ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন তারা। বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ হাতিয়ে নিয়েও কাজ করে দেননি চেয়ারম্যান ও ইউপি উদ্যোক্তা।
অপরদিকে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পসহ সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান। তেঘরিয়া গ্রামের ইউনুস, শামসুল হক ও জামাল সহ এলাকাবাসী অভিযোগ করেন- ‘বাগমারা ব্রিজ হতে নূরজাহান মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত’ সড়কের উন্নয়ন কাজের একটি কাবিটা প্রকল্প থেকে ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে চেয়ারম্যান। প্রকল্পের সভাপতির নিকট থেকে জোর পূর্বক টাকা নিয়ে গেছেন তিনি।
এব্যাপারে প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক আলী আযম মেম্বার বলেন- ‘চেয়ারম্যান এর সাথে গত দেড় বছর আমার কোন প্রকার যোগাযোগ নেই। তিনি বিভিন্ন প্রকল্পে আমাদেরকে নামে মাত্র সভাপতি বা সম্পাদক বানিয়ে রাখেন। নিজেই টাকা তুলে খরচ করেন। আমরা জানিও না।’ কাবিটার প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন- কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কাজটি শেষ হয়নি। টাকা কি করেছেন চেয়ারম্যানই বলতে পারবেন।
এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ অভিযোগ করেন- তার ব্রিকস ফিল্ডের ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ২০২১ সালে আবেদন করলেও অদ্যাবধি লাইসেন্স দেয়নি চেয়ারম্যান।
এব্যাপারে কেরণখাল ইউপি চেয়ারম্যান মো. সুমন ভূইয়া বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর ২০ জন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র দিয়ে একটি টিম করে ৩ মাসে অসংখ্য জন্মনিবন্ধন বিনা টাকায় করে দিয়েছি। আর বয়স নিয়ে জটিলতা বা সংশোধন থাকলে নিবন্ধন পেতে কিছু সময় লাগতে পারে। তবে এটা আমার কারণে নয়। সেটা অফিসিয়াল সিস্টেমের কারণে।
প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এর বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন- প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন নূর জাহান মেম্বার। মাটির কাজ ছিলো। কাজ হয়েছে। এলাকাবাসী সলিং করতে অনুরোধ করেছিলো। আমি তাদের কথা দিয়েছিলাম।