× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সিলেটে জমজমাটভাবে চলছে অনুমোদনহীন পানির ব্যবসা

মাহমুদ খান, সিলেট প্রতিনিধি।

৩১ আগস্ট ২০২৪, ১৬:১৫ পিএম । আপডেটঃ ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১৬:১৫ পিএম

ছবিঃ মাহমুদ খান

সিলেটে অনুমোদন ছাড়াই জমজমাটভাবে চলছে অনুমোদনহীন বিশুদ্ধ পানির ব্যবসা। সিলেট জেলায় শুধু মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন থাকলেও ব্যবসা পরিচালনা করছে নামে বে নামে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এতে এ পানি পান করে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হন ভোক্তারা। বিএসটিআইয়ের তদারকির অভাবেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটে বিভিন্ন নামে বেনামে অসংখ্য পানি বাজারজাতের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে সুরমা পিউর ড্রিংকিং ওয়াটার, সিলেট ড্রিংকিং ওয়াটার, পিয়াস ড্রিংকিং ওয়াটারসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর মান নিয়েও ভোক্তাদের মধ্যে অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন কয়েকশ ১০ লিটার থেকে শুরু করে ২০ লিটারের জারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘর-বাড়িতে পানি সরবরাহ করে আসছে। এসব পানি ব্যবহার করে অনেকে নিয়মিত অসুস্থ হচ্ছেন। অনুমোদন ছাড়া খাবার পানি বিক্রির অভিযোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে মামলা হলেও থেমে নেই এই ব্যবসা। এদিকে সরেজমিনে কিছু ড্রিংকিং ওয়াটার কারখানায় পরিচয় গোপন রেখে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না, হাতে নেই গ্লাভস, গায়ে নেই অ্যাপ্রোন। জার পরিষ্কার করার জন্য হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহারের কথা থাকলেও শুধু মাত্র পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া অটোমেটিক ফিলিং মেশিনে জার ভর্তি করার কথা থাকলেও মোটর দিয়ে তোলা পানিতে জার ভর্তি করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে একজন কেমিস্ট থাকার বিধান থাকলেও কোনো প্রতিষ্ঠানেই নেই। এছাড়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম রাতে চালানো হয়, যেন আশপাশের মানুষ তাদের কার্যক্রম দেখতে না পারে।

নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার ব্যবসায়ী ফয়েজ আহমেদ বলেন, আমাকে সুরমা পিউর ড্রিংকিং ওয়াটার নামের প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ লিটারের পানির জার নেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রয়োজন হয় এজন্যে তাদের কাছ থেকে পানি নেই। কিন্তু সম্প্রতি তাদের দেওয়া জার থেকে কিছু পানি দোকানের ভেতরের ফ্লোরে পড়ে গেলে দেখা যায় পানি ফ্লোরে সিমেন্টের মতো হয়ে গেছে। এরপর থেকে এ পানি কতটুকু নিরাপদ সেটি নিতেও শঙ্কিত রয়েছি।
এ ব্যাপারে সুরমা পিউর ড্রিংকিং ওয়াটারের পরিচালক মো. জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, আমাদের অনুমোদন রয়েছে। সম্প্রতি আমরা ল্যাব টেস্ট করিয়েছি, সেখানের প্রতিবেদনে ভালো ফলাফল এসেছে। লাইসেন্স ছাড়া কী ব্যবসা পরিচালনা করা যায়? আমি মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক আমরা কি অনুমোদন ছাড়া ব্যবসা করব?

টেস্টের প্রতিবেদন বা লাইসেন্সের কপি দেখাতে চাইলে তিনি বলেন, আপনাকে লাইসেন্স দেখাতে হবে কেন? আমাদের লাইসেন্স আছে বলে কল কেটে দেন।
সিলেটের কি পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের পানি সরবরাহ করার জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেস লাইসেন্স নিয়েছেন সেটি জানতে লাইসেন্স কর্মকর্তা রুবেল আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

সিলেট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, জেলার একেক জায়গায় পানির স্তর একেক রকম। তবে প্রতিটি জায়গায় কম-বেশি আয়রন রয়েছে। আমরা সেখানের বাসিন্দাদের পানি ফিলটার করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। সিলেট সিটি কর্পোরেশন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, যারা এইরকম অনুমোদনহীন ভাবে ব্যাবসা পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। =

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আশরাফুল হক বলেন, বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া পানি উৎপাদন ও বিপণন সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, পানি সরবরাহকারী ফ্যাক্টরি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট ও শ্রমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ প্রয়োজন। যারা অনুমোদন ছাড়া পানি সরবরাহ করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শিশির চক্রবর্ত্তী বলেন, অনুমোদনহীন পানি বেশির ভাগই অপরিশোধিত, এ পানি পান করা নিরাপদ নয়। এসব পানি ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, জন্ডিস, কলেরা রোগের ঝুঁকি রয়েছে অনেক সময় পানি বেশি পরিমাণে কেমিক্যাল থাকে যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন এ ধরনের পানি ব্যবহারের ফলে ত্বক, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকিও রয়েছে। তাই আমরা পরামর্শ দেই প্রাকৃতিকভাবে পানি বিশুদ্ধ করা বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করতে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য প্রকৌশল ও চা প্রযুক্তি অনুষদের অধ্যাপক ডা. রাজিয়া সুলতানা চৌধুরী বলেন, বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়া কোন পণ্য কেনা উচিত না। বাজারজাত করাও উচিত নয়। পানিতে অনেক সংক্রামক রোগ থাকে। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাই অনুমোদন ছাড়া কেউ যেন কোন পানি ক্রয় করা বা বাজারজাত করতে না পারে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নয়তো এসব পানি পান করে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

সিলেট বিভাগীয় বিএসটিআই কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মাজাহারুল হক বলেন, বর্তমানে সিলেটে ১ হাজার ১টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স রয়েছে। এরমধ্যে একটি পানি কোম্পানির অনুমোদন রয়েছে। এর বাহিরে কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, যারা এরকম অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । সম্পাদক: 01703-137775 । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.