× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বন্যা পরিস্থিতি

বন্যা দুর্গতরা বাড়ি ফিরছে, এসে দেখেন কিছুই নাই

আবুল হাসনাত অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।

৩১ আগস্ট ২০২৪, ১৮:০০ পিএম

ছবিঃ আবুল হাসনাত অপু

ভারতের উজান অঞ্চলের বন্যার পাহাড়ি ঢলের হলুদ রঙের ঘোলা পানি সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই, হবিগঞ্জের খোয়াই নদী হয়ে ধীর গতিতে গত রোববার হতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন নাসিরনগর ও তিতাস নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহের সাথে মিশে পশ্চিম অঞ্চলে মেঘনা নদী দিয়ে নামছে।

ত্রিপুরা রাজ্যের হাওড়া নদীর পানি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় হাওড়া কসবায় সালদা নদী দিয়ে গত শুক্রবার থেকে ধীর গতিতে মেঘনা নদীর উঁচু স্তরের তীব্র গতির স্বাভাবিক পানি প্রবাহের সাথে মিশে নেমে যাওয়ায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, বন্যার পানি কমে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন বন্যা দুর্গতরা। তবে, তারা বাড়ি ফিরে একেবারেই হতাশ হচ্ছেন। বাড়ি-ঘরে রেখে যাওয়া আসবাবপত্র এবং খাদ্য দ্রব্যের কিছুই পাচ্ছেন না। সব কিছুই হয় পানির সাথে সাথে ভেসে গেছে অথবা নষ্ট হয়ে গেছে। যা খাবার উপযুক্ত নয়, মাটির চুলা ভেজা থাকায় রান্না কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। মানবিক মানুষেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দলবদ্ধ হয়ে পিকআপ যোগে আখাউড়া কসবা উপজেলার বন্যা দূর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে গেলেও বন্যা দূর্গত এলাকার জেগে উঠা সড়কের পাশের এলাকায়ই দিচ্ছেন।

সড়ক যোগাযোগ ভেঙে বিচ্ছিন্ন থাকায় আখাউড়ার হাওড়া ও কসবার সালদা নদীর নিকটবর্তী প্রায় অর্ধশত গ্রাম যেগুলো এখনো ঘোলা পানিতে ডুবে আছে সেখানে এখনও তেমন কেহই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ঢুকতে পারছেন না বলে সরেজমিন পরিদর্শনকালে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান।

মঙ্গলবার পর্যন্ত এ অবস্থাই বিরাজমান দেখা যাচ্ছে। আখাউড়া উপজেলার বন্যা আক্রান্ত ৪০টি গ্রামের মধ্যে অর্ধেকই নিরাপত্তা জনিত কারণে বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় রয়েছে। যার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া এবং বাড়ীতে ফিরে যাওয়া পরিবারগুলো রাতের বেলায় ভীতিকর অবস্থায় কাটাচ্ছেন। অনেকেই ত্রাণের আশায় সারাদিন এলাকার ভাঙ্গা রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বন্যার পানি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ও কসবায় গত ২১ আগস্ট থেকে সৃষ্ট বন্যার কারণে বন্যা আক্রান্ত হয়। এতে উপজেলার বঙ্গেরচর, কালিকাপুর, বাউতলা, আড়িয়ল ও খলাপাড়াসহ ৪০টি গ্রাম এবং কসবা উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ৩টি ইউনিয়নের ৩২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। এরই মধ্যে বেশিরভাগ বাসাবাড়ি থেকে পানি সরে গেছে। তবে বন্যার কারণে আড়িয়ল ও খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর দুটি বাঁধসহ অন্তত ৮টি স্থানে সড়ক ধসে পড়ে। এতে ওইসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

জেলার কসবা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে বায়েক ইউনিয়নের বায়েক, বিদ্যানগর, পুটিয়া, খাদলা, মাদলা, বেলতুলি, শ্যামপুর। গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ধজনগর, সৈয়দপুর, রামপুর ও কাইয়ুমপুর ইউনিয়নের রহোরামপুর গ্রামে জলাবদ্ধতা রয়েছে। এদিকে বন্যার পানি চলে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে বন্যা দুর্গতরা। তারা বাড়ি ফিরে দেখছেন, বন্যার পানিতে তাদের সব কিছু ভেসে গেছে। আবার যা কিছু আছে তা, ব্যবহার যোগ্য না। বিদ্যানগর গ্রামের আমেনা খাতুন (৫৫) জানান, ঘরে এসে দেখি কিছুই নাই। সব চলে গেছে। মাদলা গ্রামের খোকন মিয়া (৪০) জানান, বাড়িতে ঠিকই আসছি, যাওয়ার সময় কিছু নিয়ে যেতে পারি নাই। একই গ্রামের ফাতেমা বেগম জানান, মাটির চুলা পানির চাপে ভেঙে মাটির সাথে মিশে গেছে। এখন যে অবস্থা এই কাদা মাটিতে চুলা তৈরি করা যাবে না। এসময় বাড়ি ফিরলেও সংসারের রান্না করা নিয়ে তিনি টেনশনে আছেন।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি জানান, আখাউড়ার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। এই উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছিল। তিনি আরও জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হাজার লোক। কসবা উপজেলা

নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার জানান, কসবার পূর্ব এলাকায় ৩টি ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছিল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০ হাজার লোক। উভয় উপজেলায়ই বেশ কয়েক হাজার হেক্টর কৃষি জমির আমন বীজতলা, শাকসবজি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ক্ষতি অপূরণীয় বলে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে আলাপে জানা গেছে।

এই ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুণবার্সন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আখাউড়ায় ৩৫ মে.টন চাল, নগদ ১০ লাখ টাকা ও ৫শত শুকনা খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আর কসবায় ১০মে.টন চাল, নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৫শত শুকনা খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর আহমেদ জানান, আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। হাওড়া ও সালদা নদীর পানি অব্যাহত গতিতে হ্রাস পাচ্ছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.