শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে এক অটোরিকশা চালক ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে কামরুন নাহার লিপি নামে এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার বাহাউদ্দিন মুন্সিকান্দি গ্রামের।
ভুক্তভোগী অটোরিকশা চালক শাহআলম বাহাউদ্দিন মুন্সিকান্দি এলাকার মৃত আলী আহাম্মদ খার ছেলে। এছাড়াও শাহালম সহ তার দুই ভাই নুর আলম ও চাচাতো ভাই মনির কেও মামলায় আসামি করা হয়। তবে মামলাটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি শাহালমের পরিবারের।
থানায় অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ আগষ্ট রবিবার সকালে জাহাঙ্গীর বেপারী মোটর সাইকেল যোগে বাহাউদ্দিন মুন্সিকান্দি থেকে মমিন আলি বাজার যাচ্ছিলেন। এসময় মামলার বাদী আইনজীবী কামরুন নাহার লিপির ভাই মামুন বেপারীর সাথে মোটর সাইকেলে ধাক্কা লাগে। এরপর জাহাঙ্গীর বেপারী ও মামুন বেপারীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি দুজনেই আহত হয়। এরপর জাহাঙ্গীর বেপারী ও মামুন বেপারী কে নিয়ে জাহাঙ্গীর বেপারীর সাথে থাকা মনির বেপারী ও সেফায়েত উল্লাহ সিকদার তাদের দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে মারামারির ঘটনায় গত ১৩ আগষ্ট মঙ্গলবার শাহালম খা,জাহাঙ্গীর বেপারী, নুর আলম খা, মনির খা, কে আসামী করে সখিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে আহত মামুন বেপারীর বোন আইনজীবী কামরুন নাহার লিপি নামে একজন। পাশাপাশি মোটরসাইকেল চালক জাহাঙ্গীর বেপারী ও বাদি হয়ে মামুন বেপারী, নাছির বেপারী, সিরাজ বেপারী, নুর মোহাম্মদ বেপারী, কালু সরদার, জাহাদ আলী বেপারীকে আসামি করে সখিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
তবে শাহালমের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবী, ঘটনায় সময় অটোরিকশা চালক শাহআলম ও তার ভাই'রা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে মামলাটি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী মনির বেপারী বলেন, ঘটনার দিন আমি, জাহাঙ্গীর ও সেফায়েত উল্লাহ সিকদার মোটর সাইকেল যোগে মমিন আলি বাজার যাচ্ছিলাম। এসময় বাহাউদ্দিন মুন্সিকান্দি এলাকায় আসলে মামুন বেপারীর সাথে ধাক্কা লাগে। সে সময় জাহাঙ্গীর ও মামুন বেপারীর সাথে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আমরা দুজন’কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু এ মামলায় শাহালম, নুর আলম ও মনিরকে আসামী করা হয়েছে। তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। হয়রানি করার উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
সেফায়েত উল্লাহ সিকদার নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার দিন সকালে আমরা তিনজন মোটর সাইকেল যোগে মমিন আলি বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় বৃষ্টি ও দুপাশে পাটখড়ি থাকায় ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না। এসময় মামুন বেপারী নামে একজন রাস্তা পার হচ্ছিলেন। মোটর সাইকেলটি চলন্ত অবস্থায় থাকায় তার সাথে ধাক্কা লাগে। তখন দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। কিন্তু অটোরিক্সা চালক শাহালম ও তার ভাই'রা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তাদের মামলায় আসামী করায় আমরা হতভম্ব।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অটোরিকশা চালক শাহআলম খা বলেন, ঘটনার দিন আমি সখিপুর বাজারে ছিলাম। এবং আমার আরও দুই ভাইকে আসামি দেওয়া হয়েছে তারা ঢাকায় থাকেন। কিন্তু আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। মামলায় যে বাদী হয়েছে এ্যাডভোকেট কামরুন নাহার লিপি’র সাথে আমার জমি-জমা নিয়ে বিরোধ ছিল। এর আগেও কামরুন নাহার লিপি আমার নামে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করেছিল। সেই মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। আমি একজন অটোরিকশা চালক। দিন এনে দিন খাই। এই মামলার বাদী আইনজীবী লিপি প্রভাবশালী হওয়ায় আমাকে বারবার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি চাই সঠিক তদন্ত করে এই মিথ্যা মামলা থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হউক। পাশাপাশি আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে যে হয়রানি করছে তার বিচার দাবী করছে।
এবিষয়ে মামলার বাদি আইনজীবী কামরুন নাহার লিপির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি।
এ ব্যাপারে সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মাসুদুর রহমান বলেন, এবিষয়ে একপক্ষের একটি মামলা হয়েছে এবং অপরপক্ষ অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। কেউ যদি মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে থাকেন তদন্ত করে আমরা দেখবো।