টেকনাফ- উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এতে নতুন করে আবারো আতংক দেখা দিয়েছে । মিয়ানমারে টানা সংঘর্ষের ফলে রোহিঙ্গারা কৌশলে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে। এসব অনুপ্রবেশকারীদের বেশিরভাগরাই আশ্রয় নিচ্ছেন উখিয়া -টেকনাফসহ অন্যান্য আশ্রয় শিবিরে।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এর সাথে সাংবাদিকদের আলাপকালে তিনি জানান - মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাতের কারণে গত কয়েক মাসে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রায় আট হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
তিনি জানান - নীতিগতভাবে সরকার নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সীমান্তের ফাঁকফোকরের ভেতর দিয়ে তারা ঢুকে পড়েছে। উপদেষ্টা আরও জানান, বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে শিগগির আলোচনা হবে। সীমান্তে অবশ্যই অনুপ্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে।
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরিন সংঘাতের কারণে হাজার রোহিঙ্গা টেকনাফ - উখিয়া সীমান্তে ঢুকে যাচ্ছে। বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী'র চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করছেন রোহিঙ্গারা। এদের দ্রুত থামাতে হবে। আর কোন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া যাবেনা।
উখিয়া - টেকনাফের স্থানীয়রা বলছেন- রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে স্থানীয়দের নানাবিধ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অনিরাপদ হয়ে উঠেছে উখিয়া - টেকনাফের জনপদ। এসব রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের কারণে প্রতিনিয়ত খুন, গুম,ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনা ঘটছে।
উখিয়া ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান- দুপক্ষের হামলায় রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত হত্যা ও হামলার শিকার হচ্ছেন। তাই তারা বাংলাদেশে চলে আসার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ করছেন এখানকার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। ইতিমধ্যে অনেকে বাংলাদেশে চলেও এসেছেন। তবে এবার নিপীড়নের শিকার হলেও কোনো অবস্থাতেই জন্মভূমি না ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।
রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ আয়ুব বলেন , ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে ভুল করেছি। সেটা দ্বিতীয়বার যেন অন্যরা না করেন। মিয়ানমারে এখন জান্তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে এখনই স্বদেশে ফিরে যাওয়া জরুরি। আমরা আর কাউকে বাংলাদেশে আসতে দিতে চাই না। বরং এখনই সময় সেখানে আমাদের চলে যাওয়া। যেটা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে যেতে পারলে খুবই ভালো হয়।
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর অধিনায়ক মো. ইকবাল বলেন, নতুন করে আর কোন রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে ঢুকতে দেয়া হবেনা। এবিষয়ে আমরা তৎপর আছি।
শরণার্থী কমিশন বলছে, নতুন করে যে কোনো অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমাদের বর্ডার গার্ড (বিজিবি) অত্যন্ত সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
অনুপ্রবেশের পাশাপাশি ওপার থেকে নিয়মিত ভেসে আসছে ভারি অস্ত্রের ঝনঝনানি। এর ফলে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে আতঙ্কে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।