বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব কারামুক্ত মজলুম আলেম মাওলানা মোহাম্মদ মামুনুল হক বলেছেন, 'ইসলাম প্রিয় জনতা, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী, এদেশের আলেম সমাজ, ইমাম সাহেব, এবং ধর্মপ্রান মুসলমান, আমাদেরকে এই আধিপত্যবাদ বিরোধী, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের সাথে কাদে কাদ মিলিয়ে ৫ আগস্টের বিজয়কে সংরক্ষণ করতে হবে।'
'মনে রাখতে হবে, ১৯৭১ সালের মতো আমাদের এই অর্জিত বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার জন্য একটি কুচক্রী মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারা এই সুযোগে নতুন করে ইসলাম বিরোধী ধারায় দেশকে পরিচালিত করবার পায়তারা চালাচ্ছে। আমরা দেখেছি আগস্ট বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য ছিল এ জাতির মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য এবং সমন্বয়। স্কুল-কলেজের ছাত্ররা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পাশাপাশি মাদ্রাসার ছাত্ররা টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায় সকল ভেদাভেদের দেয়াল ঘুড়িয়ে দিয়ে একটি ঐক্যর প্লাটফর্ম তৈরী করেছিল।'
'এ ঐক্যই আগস্ট বিপ্লবের ভিত রচনা করেছিল। কাজেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে বিগত ৫০ বছর এই পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার রাজনীতিটা যদি আমরা একটু গভীরভাবে বুঝবার চেষ্টা করি তাহলে দেখবো, শেখ হাসিনার প্রধান দুই বৈশিষ্ট্য ছিল, এক প্রতিশোধের রাজনীতি, দুই হচ্ছে বিভাজনের রাজনীতি। শেখ হাসিনা দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে অর্থনৈতিকভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করে নরেন্দ্র মোদির হাতে দেশকে তুলে দিতে চেয়েছিল। '
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে মৌলভীবাজার শহরের শাহমোস্তফা রহঃ ঈদগাহ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন তরুণ প্রজন্মের আলোচিত এই আলেম।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত, আহত শহীদদের জন্য দোয়া, দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও পতিত স্বৈরশাসক ও তার সহযোগী অপরাধিদের বিচারের দাবিতে এই গণসমাবেশের আয়োজন করে মামুনুল হক এর নিজ দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
সংগঠনের জেলা সভাপতি মুফতি হাবীবুর রহমান কাসেমী'র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হিফজুর রহমান হেলাল এর সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, দলের নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করিম জালালী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল আজিজ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লা আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা ও কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা সামিউর রহমান মূছা। এছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মীরাও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে মামুনুল হক আরও বলেন, মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা অর্জন করা যতো কঠিন তার চেয়ে বেশি কঠিন স্বাধীনতা রক্ষা করা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বহু মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের একবছর অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই সেই মুক্তিযুদ্ধের সফলতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ছিনতাই করা হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ বলে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা রেখে ইনশাআল্লাহ বলে যে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, নির্বাচনে বিজয়ী হলে এদেশে কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন হবেনা। এভাবে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই আখ্যা দিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার বিধান নিয়ে যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল,কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের কয়েকদিন পরেই পার্শবর্তী রাষ্ট্রের লিখে দেয়া প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে যে সংবিধান জাতির ঘারে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার বিপ্লবের সেই কমিটমেন্টকে ছিনতাই করা হয়েছিল। ১৯৭২ এর সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী সংবিধান। এই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী সংবিধান, বৈষম্য বিরোধী সংবিধান। ৭২ এর সংবিধান এদেশের মুক্তিযুদ্ধের নির্মোহ আন্দোলনের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার সংবিধান। এই সংবিধানের মাধ্যমে এদেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। সেই বিতর্কিত সংবিধানের দোহাই দিয়ে এদেশের মানুষের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে চেতনা বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
এর আগে গণসমাবেশে যোগ দিতে সড়ক পথে বুধবার রাতে মৌলভীবাজার এসে পৌঁছান মাওলানা মামুনুল হক। এসময় দলীয় নেতাকর্মীরা মোটর শোভাযাত্রা দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন। সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও কয়েক হাজার জনতার ঢল নামে।