নির্বাচনের কোনো ঘোষণা না হলেও ভোলা-৪ (চরফ্যাসন-মনপুরা) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির দুই হেভিওয়েট নেতার পক্ষে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। পাশাপাশি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছে তাদের নেতাকর্মীরা। এসব কর্মসূচিতে একপক্ষ অপরপক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও নানা অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ করে আসছে। এ নিয়ে এলাকায় যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
মনোনয়নপ্রত্যাশী দুজন হলেন- তিনবারের সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. নাজিম উদ্দীন আলম এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। নাজিম উদ্দীন আলম আসনটি চতুর্থবারের মতো মনোনয়ন পেয়ে ধরে রাখতে সচেষ্ট। আর নুরুল ইসলাম নয়ন আসনটিতে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়ে নেতৃত্ব দিতে চান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বিএনপির প্রচারণা চালানোসহ নাজিম উদ্দীন আলমের পক্ষে সভা-সমাবেশ করছে নেতাকর্মীরা।
চতুর্থবারের মতো নাজিম উদ্দীন আলম মনোনয়ন পেলে চরফ্যাসন ও মনপুরায় জয়ী হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করবেন বলে জনগণকে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। অন্যদিকে নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের পক্ষেও তার নেতাকর্মীরা সভা- সমাবেশ করছে। দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ নির্বাচিত হলে চরফ্যাসন ও মনপুরা এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করবেন বলে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
নাজিম উদ্দীন আলম গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চরফ্যাসন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মালতিয়া, সহসভাপতি আ.ন.ম আমিরুল ইসলাম মিন্টিজ মিয়া, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সোহেল, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি দীপু ফরাজি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মীর সায়েদ প্রমুখ।
আর নুরুল ইসলাম নয়ন গ্রুপের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কয়ছর আহমেদ কমল, সাবেক যুববিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্লাহ বাহার, পৌর কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ভুট্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সিকদার, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম রাসেল, মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খান প্রমুখ।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মালতিয়া বলেন, নাজিম উদ্দীন আলমের সবচেয়ে বড় শক্তি তৃণমূলের নেতৃত্ব তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনবার এমপি ও দীর্ঘ সময় চরফ্যাসন উপজেলা বিএনপির সভাপতি থাকায় নেতৃত্বের আগাগোড়া তার হাতেই তৈরি। তা ছাড়া সাধারণ জনগণের মাঝেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচনে নাজিম উদ্দীন আলমকে দল মনোনয়ন দেবে। আমরা তার পক্ষে চরফ্যাসনে কাজ করছি।
পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম ভুট্ট বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম এ আসনে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে পারেননি। এমনকি দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের খবরও রাখেননি তিনি। সবকিছু বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে এ আসনে নুরুল ইসলাম নয়নকেই মনোনয়ন দেবে বিএনপি- আমরা এটাই বিশ্বাস করি। কারণ বর্তমানে চরফ্যাসন ও মনপুরায় বিএনপিতে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব খুব প্রয়োজন।
দুই ভাগে বিভক্ত আলম ও নয়ন গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ ও দলের অঙ্গ- সংগঠনগুলোর কমিটি গঠনসহ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি চরফ্যাসন উপজেলা বিএনপির মূল দল ও পৌর কমিটিকে বিলুপ্ত করাসহ উপজেলা যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে নয়নপন্থিরা পদ পেয়েছে। তাই দলের তরুণ নেতাকর্মীদের মধ্যে নুরুল ইসলাম নয়নের আধিপত্য বেড়েছে।
বিএনপির তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেছেন,দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা নিজেদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
এতে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা দিনদিন হতাশ হয়ে পড়ছেন। সব মিলিয়ে এ আসনে বিএনপি এখন কোন্দলে জর্জরিত হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে নাজিম উদ্দীন আলম বলেন, প্রায় ১৬ বছর আমাদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সবকিছু বিবেচনা করলে আগামী সংসদ নির্বাচনে দল এ আসনে আমাকেই মনোনয়ন দেবে।
তা ছাড়া চরফ্যাসন ও মনপুরা আসনে বিএনপির কোনো বিভেদ বা গ্রুপ চাই না। সবাই এক এবং দলের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার হয়েই বিএনপির নেতাকর্মীরা কাজ করবে। নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, রাজপথে বহু আন্দোলন সংগ্রাম করে হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। দলের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমি আশা করি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তথা দলের সর্বোচ্চ কমান্ড এসব বিষয় বিবেচনা করবেন। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। তা ছাড়া চরফ্যাসনে দলের কোনো হিংসা বিভেদ বা গ্রুপিং চাই না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার হয়েই আমরা আগামীতে কাজ করব।