× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মৌলভীবাজার

বন্যায় ভেঙে গেছে কৃষকদের স্বপ্ন!

জায়েদ আহমেদ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি।

১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:২৩ পিএম

ছবিঃ জায়েদ আহমেদ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বন্যায় আদমপুর, আলীনগর, শমসেরনগর, পতনঊষার, মুন্সিবাজার এলাকার ফসলী জমির ১০০ হেক্টর আউশ ও ৩ হাজার হেক্টর আমনের ফসল ও ১ হাজার হেক্টর সবজ্বি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ৩২ লাখ গ্রাফটিং টমোটোর চারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে উপজেলার প্রায় ১০ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

স্থানীয় কৃষকরা সরকারি খরচে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফসলি জমিতে জমাট বাঁধা বালু ও পলি মাটির স্তর সরিয়ে দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় সাম্প্রতিক ধলাই নদীর বন্যায় প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙ্গনের ফলে ফসলী জমিতে বালু ও পলি মাটির স্তুপ জমে পড়েছে। বালু ও পলি মাটির স্তুপের নীচে চাপা পড়েছে কৃষকের স্বপ্ন।

তাছাড়া,কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নেরর ছাইয়াখালী হাওর,পতনঊষার ইউনিয়নের কেওলার হাওর এলাকা সবচেয়ে নিচু হওয়ায় ও বন্যার পানি স্থায়ী হওয়ায় সেখানকার কৃষক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পাশাপাশি আমনের চারা না থাকায় কৃষকদের পাশের উপজেলা থেকে অধিক মূল্যে চারা সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

এছাড়া আদমপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের আব্দুল করিম, মাধবপুর ইউনিয়নের আহমদ আলী, মোবারক হোসেনের গ্রাফটিং টমোটা চারা বিনষ্ট হয়। 

দক্ষিন গোলেরহাওড় গ্রামের ৪০ বছর বয়সী বর্গা চাষী বদরুল ইসলাম বলেন, ৬ কিয়ার জমিতে আমনের চাষ করেছিলেন। ফসলের বাড়বাড়ন্ত দেখে মনে দোলা লেগেছিল। মৌসুমি বাতাসে সবুজের ঢেউ মনে দোলা দিয়েছিল। কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেল। ক্লান্ত বদরুল কথা বলার শক্তি পাচ্ছিলেন না। ফসলের মাটে পানিতে নষ্ট হওয়ায় বাতাসে উৎকট গন্ধ। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, সবকিছু পানিতে শেষ হয়ে গেছে। আউশ ধান কাটার সময় আর আমন চাষের সময় এই বন্যার ক্ষতি অপরিসীম। বন্যার কারণে সব স্বপ্ন ভেস্তে গেছে।

বদরুলের মতো এরকম হাজারো কৃষকের নবান্নের স্বপ্নকে ভাসিয়ে দিয়ে জীবনটাকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। মধ্য ভাদ্রের এ সময়টাতে কৃষক আশায় বুক বাঁধে আশ্বিনে ঘরে আসবে নতুন ধান। ঠিক এ সময় পানির এমন দৈত্যের মতো আচরণ কৃষকদের জীবনটা যেন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।

কোনা গাঁও গ্রামের ৫৮ বছর বয়সী মানিক বললেন, এক ফসলি চাষ হয়। পানিতে সব নষ্ট করে দিয়েছে। এখন ঘরের মানুষের খাবারের ব্যবস্থার কথা চিন্তা হলে রাতে চোখে ঘুম আসে না।

শুধু মকাবিল আর বনগাঁও নয়। এই দৃশ্য উপজেলার ফসলী জমি'র। এসব এলাকা ঘুরে ফসল ধ্বংসের কারণে মানুষের আহাজারি শোনা যায়।

ভূমিহীন কৃষক আবুল হোসেন তিন কিয়ার জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছিলেন। তাঁর সংসারে তিন কন্যা আর স্ত্রী। পানির স্রোতে ঘর ভেসে গেছে, ধানখেত হয়েছে বিরান। বিভিন্ন এলাকা থেকে ত্রাণ নিয়ে আসা মানুষের দিকে হাত বাড়িয়ে সাহায্য চাওয়া ছাড়া তাঁর আর কোনো কাজ নেই। এ রকম আফসোসের সুর ও কান্নার কথা সবার মুখে মুখে।

ছমির উদ্দিন নামের আরেকজন বর্গাচাষি বললেন, এখন যদি বিনা পয়সায় সরকার বীজ, সার দিয়ে আমাদের সাহায্য করে,তাহলে এই মৌসুমেই আরেকবার চাষের চেষ্টা করতাম। প্রকৃতির কাছে হেরে না গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বিছন মিয়ার মতো অনেকের মনে। তাঁদের নেই মনোবল এখন ও আছে। প্রযোজন শুধূ সহযোগীতার।

কৃষক সামসুল, মাসুক মিয়া, আব্দুল জব্বার জানান, আমনের চারা রোপণ করার কয়েক দিন পর থেকে বন্যা শুরু হয়। বন্যার পানির নিচে থাকায় জমির আমনের রোপিত চারা পচে নষ্ট হয় যায়। এখন বন্যার পানি কমলেও নতুন করে চাষ করার মতো সময় নেই। তাছাড়া সার,বীজ এবং শ্রমিকের মজুরি বাবদ যে অর্থ খরচ হবে সেটাও ব্যয়ভার বহন কঠিন। সরকারীভাবে সহযোগিতা না করলে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব, এখন অনেক কৃষকের অবস্থাই তাদের মতো। তাঁরা নিজের জমিতে ফিরে যেতে পারলে মনের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এই মনোবল এখনো আছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় জানান, বন্যায় উপজেলার সাড়ে ৬হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে। কৃষকদের মাঝে দ্রুত সময়ে আমনের ৭৫ ও বীনা-১৭ জাতের বীজ সরবরাহ করা হবে। যা দ্রুত সময়ে রোপন করা যাবে, এতে কিছুটা হলেও কৃষক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.