রংপুরে এক যুব উদ্যোক্তার পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে ১৫ লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ঋণ করে লীজ নেয়া মৎস খামারের মাছ মারা যাওয়ায় দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তা থানায় অভিযোগ দিয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও খামারের শ্রমিকরা। এদিকে পুকুরে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনের ঘটনায় এলাকায় অন্য খামারীদের মাঝে আতংঙ্ক বিরাজ করছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, গোটা পুকুর জুড়ে মৃত মাছ ভেসে বেড়াচ্ছে। বেশিরভাগ মাছ পুকুরে পঁচে গেছে। পঁচা মাছের দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। পুকুর থেকে মৃত মাছ অপসারণের কাজে ব্যস্ত ছিলেন খামারের কয়েকজন কর্মচারী।
জানা গেছে, রংপুর নগরীর মহব্বত খাঁ মানহাকুঞ্জ নন্দোন পুকুর লীজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছেন এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান মুরাদ (৩১)। তিন একর আয়তনের পুকুরে রুই, মৃগেল, কাতল, তেলাপিয়া, শিং, মোয়া, কালবাউস, পাঙ্গাস, কার্ফু, টেংনা, বিগ্রেড, সিলভার কার্পসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ চাষ করে আসছেন তিনি। এসব মাছের পরিচর্যার জন্য ১২ জন কর্মচারী নিয়মিত মৎস খামারে কাজ করেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে খামারের কর্মচারীরা বাড়িতে ভাত খেতে গেলে দূর্বৃত্তরা পুকুরে বিষ ও গ্যাসের ট্যাবলেট প্রয়োগ করে পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে গোটা পুকুরে মৃত মাছ ভেসে উঠে। কর্মচারীরা পুকুরের পাড়ে গ্যাসের ট্যাবলেট ও মিমটক্স নামের বিষের বোতল পায়।
এ ঘটনার পর উদ্যোক্তা মেহেদী পুকুরের অবশিষ্ট মাছ রক্ষায় অক্সিজেন ট্যাবলেটসহ জিওলাইট প্রয়োগ করে। এতেও পুকুরের মাছ রক্ষা হয়নি। দূর্বৃত্তদের শত্রুতায় তার ১৫ লাখ টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। বিষ প্রয়োগে পুকুরের পানি দূষিত হওয়ায় নতুন করে মাছ চাষ করতে বেগ পেতে হচ্ছে মেহেদীকে।
খামারের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের পুকুরে অনেক প্রজাতির মাছ ছিল। প্রায় ৬০ থেকে ৭০ মন মাছের পোনা ছাড়া হয়েছিল। কিছু কিছু মাছ তিন থেকে চার কেজি ওজনের হয়েছিল। বিষ ও গ্যাসের ট্যাবলেট দিয়ে সব মাছ মেরে ফেলছে। সকালে পুকুর পাড়ে গ্যাসের ট্যাবলেট ও বিষের বোতল পেয়েছি।
কর্মচারী সামসুল হোসেন বলেন, অনেক দিন ধরে মাছ চাষ করা হচ্ছে, কিন্তু কেউ কোনদিন এমনটি করে নাই। কয়েকদিন আগে গ্রামের একটা ছেলে চুরি করে বরশি দিয়ে মাছ ধরেছিল। তাকে মাছ না ধরতে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শত্রুতার জেরে তারা এ কাজ করতে পারে। যেই মাছের ক্ষতি করেছে, আমরা তার উপযুক্ত বিচার চাই।
অপর কর্মচারী বক্কর হোসেন বলেন, এই পুকুরে চাষ করা মোয়া ও টেংনা মাছের পেটে ডিম ছিল। ১০ মনের মত মোয়া মাছ ডিম দিলে পরবর্তীতে ২০ থেকে ৩০ মন মোয়া মাছ পাওয়া যেত। তারা পুকুরের মা মাছগুলো ধ্বংস করেছে। এখন পুরো পুকুর মাছ শূন্য।
স্থানীয় মৎস চাষী মমিনুর রহমান বলেন, মেহেদী ভাইয়ের পুকুরে বিষ প্রয়োগ করার পর থেকে এলাকার আমরা অন্য খামারীরা আতংঙ্কিত হয়ে পড়েছি। যে কোন সময় আমাদেরও পরিণতি এমনটি হতে পারে ভেবে আতংঙ্কে দিন পার করছি। আমি প্রশাসনের কাছে দাবী রাখবো অবিলম্বে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
ক্ষতিগ্রস্থ চাষী মেহেদী হাসান মুরাদ বলেন, পুকুরের মাছগুলো ৩ থেকে ৪ কেজি ওজনের হয়েছিল। পুকুরে বিষ ও গ্যাসের ট্যাবলেট প্রয়োগ করায় মাছ মরে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
মেট্রোপলিটন হারাগাছ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম সোহেল বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ ওই উদ্যোক্তা থানায় এসেছিলেন। তাকে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং একটি অভিযোগ দায়েরের জন্য বলেছি। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।