প্রতি বছর ১১২ টি স্কুল থেকে জোর পূর্বক ১ লাখ ১২ হাজার টাকা আদায় করে ভাগ বাটোয়ারা করার অভিযোগ উঠেছে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ সাবেক শিক্ষক কমিটির বিরুদ্ধে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতন নেছা গোল্ডকাপ নামে টাকা তুলে খরচ করতো। কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষক মো. আমজাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অধীর দত্ত।
উক্ত কমিটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগে নির্বাচিত তৎকালীন কমিটির সভাপতি জিএমএ লতিফ অবসর গ্রহণ করার পরে তার মেয়াদকাল থাকা সত্ত্বেও বাসাইলভোগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আমজাদ হোসেন, উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা অধীর দত্ত ও হরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে সমিতি দখলে নেন।
জানা গেছে, শ্রীনগর বাজারের ভিতরে শিক্ষক সমিতির নিজস্ব আড়াইতলা ভবন রয়েছে। নিচ তলার ৭টি দোকান ঘর থেকে মাসিক ৩৮ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যায়। আমজাদ হোসেনসহ সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ বিগত ৮ বছরে ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আদায় করলেও এর কোন হিসাব শিক্ষকদের নিকট প্রদান করেননি। ইতোপূর্বে এই টাকা দিয়ে শিক্ষকদের বিদায় সংবর্ধনা, শিক্ষকদের অসুস্থতা ও সন্তানের বিয়েতে সহায়তাসহ শিক্ষকদের বিভিন্ন কল্যাণে ব্যয় করা হতো। কিন্তু বিগত ৮ বছরে কোন শিক্ষককেই বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়নি বা শিক্ষকদের কল্যাণে কোন টাকা ব্যয় করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমিতি দখলের পরে অদ্যবধি শিক্ষক সমিতির কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড করে আসছিল। প্রত্যেক স্কুল থেকে আক্তার হোসেনের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা করে আদায় করে স্কুল গুলোকে শ্লিপফান্ড প্রদান করা হতো। এতে প্রতি বছর তারা ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিতো। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতন নেছা গোল্ডকাপে জোর পূর্বক ১১২টি স্কুল থেকে ১ হাজার টাকা করে আদায় করে ভাগ বাটোয়ারা করতো। অথচ এ খাতে সরকারি অনুদান আসতো প্রতিটি পর্যায়ে। উপজেলার জন্য আসতো ৪৫ হাজার টাকা। প্রতিটি স্কুলের জন্য আসতো ২ হাজার টাকা করে এবং প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য বাড়তি ৩ হাজার টাকা করে। কিন্তু এ টাকা স্কুল গুলোকে না দিয়ে তারা আত্মসাৎ করতো।
২০২৪ সালে কোন খেলা আয়োজন না করেই যাবতীয় টাকা আত্মসাৎ করে নিয়েছে। উপজেলার ১১২টি স্কুলকে প্রতি বছর তারা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা বই গায়ের দামে কিনতে বাধ্য করতো। সমিতির টাকা শিক্ষকদের কল্যাণে কোনরূপ ব্যয় না করে কর্মকর্তাদের খুশি করতে তাদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ের অনুষ্ঠানে এবং উর্ধ্বতম কর্মকর্তাদের নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে কিছু টাকা ব্যয় করতো। এ খাতেও প্রকৃত খরচের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি খরচ দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া শ্রীনগর সদরের একজন শিক্ষিকা দুই বার ৩ বছর করে অষ্ট্রেলিয়ায় থেকে এসে শিক্ষক নেতাদের ম্যানেজ করে এরপর বহাল তবিয়তেই রয়েছেন। এক্ষেত্রে দুইবারে ৮লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, আমজাদ হোসেন দুই বছর আগেই অবসর গ্রহণ করলেও নির্বাচন না দিয়ে শিক্ষক সমিতির ৮ বছরের লুটপাট আকড়ে বসেছিলেন।
হরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১ হাজার করে টাকা তুলে শিক্ষা অফিসারের কাছে জমা দিয়েছি। হিসাব তিনি দিতে পারবে।
উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. আমজাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি বলেন, আমি ২ বছর আগেই অবসরে গিয়েছি। শিক্ষা অফিসার এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে। আমাকে দাওয়াত করা হতো, আমি উপস্থিত হতাম।
অধীর দত্তের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির দায়িত্বে ছিলাম। তিনি বলেন উপজেলার প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের কমিটি আলাদা। আরো বলেন শ্রীনগর বাজারে সমিতির যে ভবন রয়েছে সেটির কমিটিও আলাদা। আমি ওই কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
শ্রীনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতারের কাছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতন নেছা গোল্ড কাপ ২০২৪ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খেলা বন্ধ তবে বিভিন্ন কাজে খরচ করেছি। তাকে প্রশ্ন করা হলে, আপনি এই ভাবে টাকা তুলতে পারেন ? তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।