কিশোরগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে নরসুন্দা নদী। মানচিত্রে নদী থাকলেও বাস্তবে পুরোটা নেই। যেটুকুও আছে সেটুকুর পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। এক সময় এই নদী দিয়ে চলাচল ও পণ্য পরিবহন করত আশ-পাশের জেলার মানুষ। আর এখন কচুরিপানা ও আবর্জনা এবং ময়লা ফেলে একে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে। নদী খেকোরা নদীটির দুই তীর দখল করে বানিয়েছে স্থাপনা। বিভিন্ন সময় এসব স্থাপনা ভাঙার কার্যক্রম শুরু হলেও তা বেশিদ‚র আগায়নি। এ যেন নদীর এপার ভাঙে, ওপার গড়ে।
জানাযায়, ২০১২ সালে নরসুন্দাকে বাঁচাতে ১১০ কোটি টাকা ব্যায় নদী খনন করা হলেও পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা যায় নি; বরং কিশোরগঞ্জ শহরের ভেতরের অংশ এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ছোট বড় প্রায় ৪০টি পয়েন্টের মাধ্যমে নামছে পৌর শহরের ময়লা ও দুষিত পানি।
এছাড়াও শহরের পুরান থানা, বড় বাজার, কাঁচারি বাজারসহ কয়েকটি বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা ও জবাই করা পশুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নদীর পাড় দিয়ে চলতে হলে নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হয়। নদীর পাড় দিয়ে বানানো ওয়াকওয়ের অবস্থা আরও শোচনীয়। নদীর তীর বলতে যে সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ও নান্দনিক পরিবেশ অনুমান করা হয়, সেটি এখানে অনুপস্থিত।
এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন পথচারী বলেন, নদীর দুই পাড়ে সাইনবোর্ডে নদী সুরক্ষায় বিভিন্ন ধরনের নিদের্শনা থাকলেও এটি কোন কাজে আসছে না। আমরা যারা পথচারী আছি যতদূর যাই নাক চেপে হাটতে হয়। এত দুর্গন্ধ সহ্য করা যায় না।
মুক্তমঞ্চে ঘুরতে আসা এক শিক্ষার্থী বলেন, গুরুদয়াল কলেজের পাশের মুক্তমঞ্চ এবং ওয়াচ টাওয়ার এলাকাটি মাদকসেবীদের আখড়া, সন্ধ্যার পর তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা এবং ছিনতাইয়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। তিনি এই এলাকার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখা এবং নরসুন্ধা নদী পুনরুদ্ধারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মতিউর রহমান বলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই, উজান থেকে হোসেনপুর এবং পাকুন্দিয়া উপজেলার ১৫ কিলোমিটার খনন করা হচ্ছে। ৫৮ কিলোমিটার খনন করার জন্য আমরা একটি প্রস্তাবনা দাখিল করেছি। আসাকরি সেটা অল্প সময়ের মধ্যেই অনুমোদন হবে বলে আশা করতেছি।
শুধু ঘুরতে আসা লোকজনই নয়, কিশোরগঞ্জের প্রতিটি মানুষের দাবি, নরসুন্ধা যেন প্রাণ ফিরে পায়। নরসুন্দা নদীর দুপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট, দালান-কোঠা অপসারণ করে নদীটি খনন করে হাওড়ের সঙ্গে পানি চলাচলের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে নরসুন্দা আবার প্রাণ ফিরে পাবে। নরসুন্দার সঙ্গে এখানকার জনসাধারণের রয়েছে গভীর মমত্ববোধ আর প্রবল ভালোবাসার টান। নরসুন্দাকে বাঁচাতে হবে। এ ব্যাপারে সাধারণ জনতা কর্তৃপক্ষের সোচ্চার ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।