রংপুরে আগাম পাকতে শুরু করেছে স্বল্পমেয়াদে উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন ধান। কৃষকের মাঠে মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে আগাম ধানের স্বর্ণালী হাসি। মঙ্গাজয়ী আগাম জাতের নতুন ধানের বাম্পার ফলন ও ভালো বাজার মূল্যে পেয়ে হাজারো কৃষক পরিবার খুশিতে আত্মহারা। ধান কেটেই আগাম আলুর জন্য জমি প্রস্তুত করছে তারা। এদিকে আগাম ধান কাটা শুরু হওয়ায় কার্তিক মাসে শ্রমহীন থাকতে হচ্ছে না কৃষকদের।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবারে রংপুর জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। আগাম ধান কাটা শেষে আগাম জাতের আলুর জন্য জমি প্রস্তুত করবেন চাষিরা। এজন্য আগাাম ধান কাটছে তারা। ইতিমধ্যে ১০০ হেক্টর জমির আগাম ধান কাটা হয়েছে। এই স্বল্পমেয়াদি উচ্চ ফলনশীল জাতের আগাম আমন ধান রোপনের ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এই ধান পাকে। এই আগাম ধান কাটার পর আলুসহ নানা রকম রবিশস্য আবাদ করে থাকেন চাষিরা। সেই লক্ষে রংপুরের মিঠাপুকুর, সদর উপজেলা, গংগাচড়াসহ কয়েক উপজেলায় এই আাগাম ধানের চাষ বেশি হয় থাকে।
সরজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষক হাতে কাস্তে শ্রমিক নিয়ে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছে। জমিতে পলিথিন, নেট, পেতে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন কৃষক। সবুজের মাঝে পাকা ধান খেত। কোথাও কোথাও শুধু পাকা ধান খেত। আগাম ধান কাটা নিয়ে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাকা ধান কাটছেন কৃষক। সেই ধান ট্রাক্টরচালিত ট্রলিতে বোঝাই করে নেয়া হচ্ছে উচু স্থানে, যেখানে মাড়াইয়ের কাজ করা হবে। নারীরা মাড়াই করা ধান রাস্তায় বিছিয়ে রোদে শুকানো ও পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রংপুরের হাজিরাট থানা এলাকার কৃষক মো. সাজু মিয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আগাম ধান, আলু চাষ করে আসছি। সেই ধারাবাহিকতায় এবারেও আগাম ধান চাষ করেছি। আগে এই ধানে তেমন লাভ হতো না। স্বল্পমেয়াদি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান হওয়ায় এখন লাভের মুখ দেখছি।
নয়ার হাটের কালু মিয়া জানান, আমার ধান কাটা হয়ে গেছে এবং এরই মধ্যে আগাম আলু চাষের জন্য গোবর ও সার ফেলে জমি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই জমিতে আগাম আলু চাষ করা হবে।
অন্যদিকে দিনমজুর কৃষক আজগার আলী বলেন, এই সময়টাত হামার কাজ কাম ঠিক মতোন হয় না। আগাম ধান চাষ হওয়াতে এ্যালা হামরা ধান কাটামারি করোছি। হামরা কাজ পাওছি। মজুরি অন্য সময়ের চাইতে একনা কম। তারপরও খারাপ না। যা আয় হওছে তা দিয়া সংসার চলোছে।
নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির এই ক্ষনে আাগাম ধানের চাষ হওয়ায় কাজের সমস্যা হচ্ছে না তাই সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে বলে জানান মনসুর হোসেন নামে অপর এক দিনমজুর কৃষক। তিনি বলেন, জিনিষপত্রের যে হারে দাম বাড়ছে, তাতে এমনিতেই সংসার চালানো কঠিন। আর তাতে যদি কাজ না থাকতো তাহলে না খেয়ে থাকতে হতো।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, ইতিমধ্যে ১০০ হেক্টর জমির ধান কর্তন হয়েছে। মুলত আলু ও অন্যান্য রবিশষ্যের জন্য কৃষকরা এখন আগাম ধান চাষ করে থাকে। আর নিয়মিত যে আমন ধান, সেই ধানেও অনেক এলাকায় পাকতে শুরু করেছে। এই মাসের শেষ দিকে কাটা শুরু হবে আশা করা যায়।