বাগেরহাটের কচুয়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পলাশ শেখ (৩৬) নামের এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছেন আপন মামা আব্দুর রব, কবির ও তাদের লোকজন। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ফতেপুর বাজারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে পলাশকে উদ্ধার করে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। বুধবার (৩০ অক্টোবর) বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি এবং কেউ আটকও হয়নি।
নিহত পলাশ শেখ কচুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের আফজাল শেখের ছেলে। তার স্ত্রী, এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। নিহত পলাশ শেখ স¤প্রতি কচুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক যুগ্ন আহবায়ক মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম (২৭) এলাপাথারি কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী।
অভিযুক্ত সাবেক সেনা সদস্য আব্দুর রব চন্দ্রপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও কচুয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি। কবির হোসেন স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। এই সরকার পরিবর্তনের পরে আব্দুর রব ও কবিরের নেতৃত্বে মারধর, বাড়িঘর লুট ও ডাকাতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। স¤প্রতি কচুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক যুগ্ন আহবায়ক মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম (২৭) এলাপাথারি কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছেন রব কবিরের লোকজন। তিনি এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীণ আছে। তবে প্রাণের ভয়ে রব কবিরের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। এদিকে ওই ঘটনার আগে নিহত পলাশ শেখের মারধরে দুই ব্যক্তি আহত হন বলে পুলিশ জানায়। তবে তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
নিহতের মা হেলেনা বেগম বলেন, বাবার বাড়িতে পাওয়া প্রায় দেড় বিঘা জমি জাল দলিল করে আমার ভাই বিএনপি নেতা আব্দুর রব ও কবির জাল দলিল করে নিয়েছেন। এই জমি ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে ভাইদের সাথে আমাদের পরিবারের বিরোধ ছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে রব আমার ছেলেকে ডেকে তার সাথে নিয়ে বিভিন্ন অপরাধ করিয়েছে। কয়েকদিন আগে জমি ফেরত চাইলে রব ও কবির আমার ছেলে পলাশকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করে। গতকালও আমার ছেলে বাড়িতে ছিল। স্থানীয় শিমুল কয়েকবার ফোন করে, কুমারগাড়িয়া ঘেরের (সরকারি জমিতে দখল করা ঘের) ভাগের টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নেয়। বাইরে থেকে আনা ৫জন লোক এবং স্থানীয় অনেক লোককে দিয়ে রব ও কবির আমার ছেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে আসছে। আমি রব-কবির এবং যারা আমার ছেলেকে মেরেছে তাদের ফাসি চাই। আমার ছেলেকে কেউ একটু পানিও দেয়নি বলে বিলাপ করতে থাকেন সন্তান হারা মা।
পলাশের বোন সালাম বেগম বলেন, রব ও কবির এই জমি নিয়ে আগেও আমার ভাই ও মাকে কয়েকবার মেরেছে। গতকাল তারা একদম মেরে ফেলেছে আমার ভাইকে। রব, কবির ও আকবরের নেতৃত্বে আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। তারা ২০ লক্ষ টাকাও রেখেছে, এই হত্যা মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য।
পলাশের স্ত্রী রিমা বেগম বলেন, আমার তিনটা ছেলে-মেয়ে। আমার বাবা-মা নেই, শ্বশুর-শ্বাশুরীও বৃদ্ধ। একটু জমির জন্য আপন ভাগ্নেকে মেরে ফেলল রব-কবির, আমি এখন কোথায় যাব।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সরকার পরিবর্তনের রব ও কবির এলাকাকে অশান্ত করে ফেলেছে। এমন কোন অপরাধ নেই তারা করেনা। কচুয়ার মানুষের শান্তির জন্য তাদের এখনই থামানোর দাবি জানান তিনি।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মনি শংকার পাইক বলেন, গতকাল রাতে মৃত অবস্থায় একজন মারধরের রোগী নিয়ে আসা হয়েছিল। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
আব্দুর রব ও কবির হোসেন পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রাশেদুল আলম বলেন, বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হত্যার কারণ অনুসন্ধ্যানে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও মামলা বা কোন অভিযোগ করা হয়নি, কাউকে আটকও করা যায়নি।