ছবিঃ সকেল হোসেন
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে আসন্ন শীতকে সামনে রেখে আগাম রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে এখানকার গাছিরা। দিনে কিছুটা গরম হলেও সন্ধ্যা হলেই শীত অনুভব হচ্ছে। ছয় ঋতুর সুজলা সুফলা সবুজে ঘেরা এ বাংলাদেশে ভোরের আকাশে সূর্যের উষ্ণ তাপে সন্ধ্যা নামলেই হিমেল হাওয়ায় সকালের কুয়াশায় জানান দেন শীতের উপস্থিত। দুই মাস পরই শুরু হবে পুরোপুরি শীত। এরই আগে আক্কেলপুরের গাছিরা আগাম খেজুর রস সংগ্রহের জন্য হাতে দা, হাসুয়া, বাটাল, নিয়ে ও কোমরে ডোঙ্গা বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাছা ছোলা করছে।
এক সময় এ উপজেলা গুড়ের অনেক নাম ডাক থাকলেও সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে, গ্রাম বাংলার এই প্রচীনতম ঐতিহ্যবাহী লালি ও পাটালি গুড়। গ্রামের ক্ষেত্রের আইলে, পুকুর পারে, রাস্তার দুই ধারে, বিভিন্ন ঝোপ-ঝারে ছিলো অসংখ্য গাছ। কোন পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতো এই সব খেঁজুর গাছ। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিক সভ্যতায় ইটের ভাটার রাহুগ্রাসে, বিভিন্ন ফ্যাক্টারি, লোকালয় তৈরির জন্য এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য নির্বিচারে খেজুর গাছ গুলো কেটে ফেলা হচ্ছে যার জন্য হারিয়ে যেতে বসেছে গাছগুলো।
আশ্বিনের শেষে এ উপজেলার গ্রামীন জনপদে খেজুর গাছে রস সংগ্রহ করে, গুড় তৈরি সম্পন্ন প্রস্তুতি নিচ্ছে গাছিরা। আর কয়েক দিনের মধ্যেই তারা গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু করবেন বলে জানান গাছিরা। রস সংগ্রহ শুরু হলেই কার্তিক মাস থেকে রস সংগ্রহ শুরু করে লালি, পাটালি গুড় তৈরির কাক্রকর্ম চলবে প্রায় মাঘের শেষ পর্যন্ত। এ মৌসুমে খেজুরের রস দিয়ে গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ। শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ তত বাড়বে। সুস্বাদু পিঠা ও পায়েস তৈরিতে আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের গুড় অন্যতম অনুষঙ্গ।
উপজেলার কাঁঠালবাড়ি গ্রামের গুড় উৎপাদনকারী মামুনুর রশিদ জানান, হালকা হালকা শীতের আভাস পেতেই আগেই খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের জন্য প্রায় ৫০টি গাছকে আগাম প্রস্তত করছি । প্রতিটি গাছ থেকে ৩০ কেজি করে রস হতে পারে। খেঁজুর গাছের রস, গুড়-পাটালি বিক্রয় করে খরচ বাদে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভের আশা করছি। আমি কোন কেমিক্যাল ছাড়াই ভেজাল মুক্ত স্বাস্থ্য সম্মত গুড় উৎপাদন করে থাকি।
উপজেলার সচেতন নাগরিকরা বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, তাতে এক সময় হয়তো আমাদের দেশে খেজুর গাছ থাকবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিত বেশি বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসেন বলেন, আমরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে খেজুরগাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। খেজুরগাছ ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি করে না। এই গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচও করতে হয় না। এ বছর সঠিক সময়ে শীতের আগমন হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আগাম খেজুর গাছ ঝোরা (পরিষ্কার) শুরু হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই গাছিরা রস আহরণ শুরু করতে পারবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh