বাগেরহাট জেলা সদরের বেশরগাতি এলাকায় মসজিদ গুড়িয়ে দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করেছিল তৃতীয় পক্ষ। সেনাবাহিনী পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ায় বড় ধরনের গুজব ও সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে মর্মে জানিয়েছেন বাগেরহাট জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা রুহুল আমিন খান।
সরে জমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে দেখা গেছে, ৩-৪ বছর আগে হাফিজ মাস্টার নামক জনৈক ব্যক্তি বেশরগাতি এলাকায় বায়তুল উলুম নামে একটি মাদ্রাসা তৈরির প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু তার আগে বহু বছর আগে ওই এলাকার প্রথম হাজী আফসার উদ্দিন ঘটনাস্থলের জমিতে একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করে। স্থানীয়রা ওই মক্তবটিকে মাদ্রাসায় রূপান্তর করার জন্য জোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তারা মাদ্রাসার নামকরণ করেন হাজী আফসার উদ্দিন বায়তুল উলুম মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন হাজী আফসার উদ্দিন এর ছেলে-মেয়ে ও নাতি নাতনিরা।
হাফিজ মাস্টার ওই সম্পত্তিতে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে না পেরে ২০২৩ সালে তৎকালীন বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল পাইকের সহায়তা নিয়ে মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এতে এলাকাবাসী তার উপরে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব দেখিয়ে হাফিজ মাস্টার ওই জমির কিছু অংশ এবং রাস্তা দখল করে একটি ঘর নির্মাণ করে ওই ঘরটি পাঞ্জেগানা মসজিদ বলে ঘোষণা দেন। ফলে স্থানীয় বিরোধ আরো বৃদ্ধি পায়। স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে আবারো তিনি ওই জমিতে ইট দিয়ে ঘর তৈরি শুরু করেন। বিরোধটি নিষ্পত্তি করার জন্য স্থানীয়ভাবে কয়েকবার সালিশ মীমাংসার ব্যবস্থা করা হয় হাফিজ মাস্টার উপস্থিত হলেও প্রতিবার সিদ্ধান্ত না মেনে চলে যান।
পরিস্থিতি সম্পর্কে যতদূর জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজ মাস্টার স্থানীয় ২-৩ জন ব্যক্তি ও পার্শ্ববর্তী কয়েকজন ইমামকে ভুল বুঝিয়ে ধর্মীয় অনুভুতি কাজে লাগিয়ে বিরোধ সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছিলেন। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ওই জমির মালিক তিনি নন এমনকি মসজিদে তিনি কিছুই দান করেন নাই।
ঘটনার বিষয়ে কান্দাপাড়া খেলাফাত হোসেন হাফেজিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম হাফেজ হযরত মাওঃ গাজী গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিরোধপূর্ণ সম্পত্তির মালিক জমি দান অথবা ওয়াকফ করে না দিলে সেখানে নামাজ আদায় শুদ্ধ হবে না। ওই জমির মালিক তিনি নন, তিনি দান বা ওয়াকফও করেন নাই। তাছাড়া উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিরোধপূর্ণ ঘরটি অপসারণ করার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সকলের সম্মতিক্রমে এলাকাবাসী ওই ঘরটি অপসারণ করেছে। স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী বীরোধপূর্ণ জমিতে হাজী আফসার উদ্দিন দারুল উলুম মাদ্রাসা ও একটি ঈদগাহ নির্মাণ করা হবে। সে সিদ্ধান্ত মানিয়া হাফিজ মাস্টার নিজেও এলাকাবাসীর সাথে একই রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি আরো বলেন, পবিত্র কুরআনে বর্ণিত নবীর নির্দেশে মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এমন কথা জানার পর অন্যের জায়গা দখল করে সমাজে বিভেদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষে হাফিজ মাস্টার এর তৈরী করা এক রুমের একটি ঘর এলাকাবাসী ভেঙ্গে ফেলে। কারণ মাত্র ০২ জন লোক এই ঘরটি অবৈধ ভাবে তৈরী করে তা মসজিদ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল।
বাগেরহাট জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি ও কোর্ট মসজিদের খতিব মাওলানা রুহুল আমিন খান জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে ইমাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়েছিলেন। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। মসজিদ মাদ্রাসার বিষয়ে স্থানীয়রা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে গুজব, কোন ধরনের সহিংসতা কিংবা বিতর্ক না হয় সেজন্য তিনি সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।