সাতকানিয়ার জাতীয় তথ্য বাতায়নে বিভিন্ন দপ্তরের কভারফটোতে বহাল শেখ হাসিনার ছবিসহ বর্তমান সরকারের আমলে নিষিদ্ধ অনেক তথ্য।নেই গুরুত্বপূর্ণ অনেক দপ্তরের কর্মকর্তাদের নাম।ভুলে ভরা,মনগড়া সাতকানিয়ার জাতীয় তথ্য বাতায়ন।
৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।অন্তবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. ইউনূস।ফলে দেশের সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সবজায়গা থেকে সরানো হয়েছে শেখ হাসিনার ছবিসহ আওয়ামী আমলের দলীয় নানা ছবি কিংবা দৃশ্য।কিন্তু দেশের সব জায়গা থেকে সরানো হলেও সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা সাতকানিয়ার জাতীয় তথ্য বাতায়নের বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসের সাইটের কভারফটোতে বহাল শেখ হাসিনার জনসমাবেশের হাসিমাখা ছবি।সরকারি প্রজ্ঞাপনে বাতিল ঘোষণা করা হলেও রয়ে গেলো ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের ইউটিউব লিংক কিংবা মুজিববর্ষের লোগো।
সরকারি অফিসগুলোর মধ্যে উপজেলা নির্বাচন অফিস,সাতকানিয়া পৌরসভা,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস,উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এলজিইডি,ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কভার ফটোতে শেখ হাসিনার ছবি বহাল দেখা যায়।সেই সাথে এলজিইডিতে মুজিববর্ষ উদযাপন কার্যক্রম নামে মুজিববর্ষের লোগো সম্বলিত একটি কর্ণার বিদ্যমান রাখা হয়েছে।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরে লার্নিং আর্নিং নামে শেখ হাসিনার দলীয় ছবি সম্বলিত ফটো বহাল রয়েছে।এদিকে সাতকানিয়ার জাতীয় তথ্য বাতায়ন ঘুরে শুধুমাত্র সাতকানিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কভার ফটোতে অন্তবর্তীকালীন সরকার ড. ইউনূসের ছবি দেখতে পায়।কিন্তু তাও একেবারে নিম্ন মানের।ছবিতে নাকে ও চোখের দৃশ্যের উপর সাদা দাগ এবং বিভাগের নামে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের পরিবর্তে বানান ভুলে লিপিবদ্ধ উপজেল পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় লেখা হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলার তথ্য বাতায়নে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উল্লেখ্য করে ক,খ,গ ও ঘ চার পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হয়েছে।যেখানে ঘ পয়েন্টে লেখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে কেবলমাত্র ছাত্রলীগ ভূমিকা রেখেছিল।পয়েন্টটির লেখা হুবহু তুলে ধরা হলো, "কেবল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে নতুনভাবে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কিন্তু দেশাভ্যন্তরে না-ফিরে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ করেছেন।এদের পৃথকভাবে নাম দেওয়া হয়েছে 'মুজিব বাহিনী' "
।শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালেও দেখা যায় ক খ গ ঘ চার পয়েন্ট লেখা ইতিহাস তবে দুপুর হতেই ঘ পয়েন্ট সরানো হয়।যার বিভিন্ন প্রমাণ ও তথ্য আমাদের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে।শুধু তাই নয়, সাতকানিয়ার জাতীয় তথ্য বাতায়নে ছাত্রলীগের অবদান উল্লেখ্য করে চার পয়েন্টে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা তথ্যসূত্রে দেখা যায় একজন উপজেলা টেকনিশিয়ান মহিউদ্দিনের নাম।যিনি উপজেলা প্রশাসন থেকে অনেক আগেই বদলি হলেও সাতকানিয়ার জাতীয় তথ্য বাতায়নে সাধারণ মানুষের সুচিন্তিত মতামত কামনা করে দেওয়া হয়েছে মহিউদ্দিন নামের ব্যক্তির ব্যক্তিগতনামে মেইল ঠিকানা।অথচ তিনি সাতকানিয়া নেই অনেক আগে থেকেই।
এখানেই শেষ নয়, সাতকানিয়ার জাতীয় তথ্য বাতায়নে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উল্লেখ্য করে প্রিটন সরকারের নাম লেখা রয়েছে তাও তালিকায় কয়েকজন এসআইয়ের নামের পর।অথচ গত ২৮ জুলাই তাকে রাঙ্গামাটিতে বদলি করে মিজানুর রহমানকে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়।প্রিটনের পর মিজানুর রহমানকেও প্রত্যাহার করা হয়।বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল।অথচ জাতীয় তথ্য বাতায়নে তার নামগন্ধ নেই।সাতকানিয়ায় বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও সাতকানিয়ার জাতীয় তথ্য বাতায়নে নেই সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিসের কোন কর্মকর্তা কিংবা সুনির্দিষ্ট যোগাযোগের মোবাইল নাম্বার।এছাড়াও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স,বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড,উপজেলা যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নাম্বার নাম ঠিকানা কিছুই পাওয়া যায় নি।সাতকানিয়ার গ্রাম পুলিশ হিসেবে আট জনের তালিকা থাকলে নেই যোগাযোগের কোন নাম্বার।সাতকানিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংখ্যার তালিকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা দেখানো হয়েছে মাত্র একটি।মাধ্যমিক,মাদ্রাসা,কলেজসহ বাকি সব প্রতিষ্ঠানে শূন্য দেখানো হয়েছে।
সাতকানিয়া থানার তালিকায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম্বার সঠিক থাকলেও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের যোগাযোগের জন্য যোগাযোগ তালিকায় দেওয়া সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম্বারটি বর্তমানে ব্যবহৃত নাম্বার নয়।সেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার,সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম্বার থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তাদের নাম্বার সংযোগ না করেই যোগাযোগ কলামটা অসম্পূর্ণ রাখা হয়েছে।
এই বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা আইসিটি অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, এগুলো স্ব স্ব দপ্তরের,নির্দেশনা হচ্ছে আপডেট করার দায়িত্ব তাদের।কেউ যদি কিছু না বুঝে আমার থেকে হেল্প চাই তখন আমি তাদের হেল্প করি।এই বিষয়ে একবার ট্রেনিংও দেওয়া হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন বিশ্বাস বলেন, এরকম কোনকিছু তো থাকার কথা না।সবকিছু আপডেট করা হয়েছে। এরপরও এরকম কিছু থাকলে দেখে সেটা ঠিক করে নিচ্ছি।