দেশের সড়ক-মহাসড়কের দু’ধারে বেশিরভাগ পরিত্যক্ত জায়গা ভরে আছে আগাছায়। অন্যদিকে জনবসতি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কমছে দেশের কৃষি জমি। এক ইঞ্চি জায়গাও যেন অনাবাদি না থাকে, সেই ঘোষণায় অব্যবহৃত জায়গায় সবজি ও ফলের চাষ, 'অর্থ-পুষ্টি বারোমাস’ শীর্ষক ইনোভেশন আইডিয়া বাস্তবায়নে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
এই উদ্ভাবনী আইডিয়ার দারুণ ফল মিলছে কামাল হোসেনের সবজি চাষে। সড়কটির এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় অব্যবহৃত জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে সবজি বাগান। চাষ করা হয়েছে শিম, লাউ, করলা, বেগুন, টমেটো,পেঁপে, মরিচসহ বিভিন্ন জাতের সবজি।সেগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ সবজি তিনি বাজারে বিক্রি করছেন। এতে তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তা শফিউজ্জামান শাহিন বলেন, কামাল হোসেন প্রথমে এই ইনোভেশন আইডিয়া বাস্তবায়ন করেন।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনায় এই চাষ শুরু করতে পেরে আমি সফল হয়েছি। কামাল হোসেন রাস্তার পাশে সবজি চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি আমাদের সব ধরনের সহায়তা পেয়েছেন। আমরা আশা করছি, পুরো উপজেলায় রাস্তার পাশে সবজি চাষের মাধ্যমে ধামরাইয়ের সবজির চাহিদা পূর্ণ হবে।
কামাল হোসেনের সফলতার পর স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। কৃষি অফিসের সহায়তায় তিনি বিনা খরচে সার ও বীজ পেয়েছেন এবং চাষে সফল হয়েছেন।
ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে সবজি চাষি কামাল হোসেন বলেন, আমরা কখনো ভাবতেও পারিনি, যে মহাসড়কের পাশে সবজি চাষ করে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। কিন্তু কৃষি অফিসারদের সহযোগিতায় তা সম্ভব হয়েছে। এ বছর শিম, লাউ, করলা, টমেটো,পেঁপে, , মরিচসহ হরেক রকমের সবজির চাষ করে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়েছি। বিক্রি করেছি বাজারেও। এতে লাভ হওয়ায় বেশ আনন্দ লাগছে।আগামীতে আরও মনোযোগ দিয়ে সবজি চাষ করব।
তিনি আরো বলেন, মহাসড়কে পাশে চাষাবাদ করলে, রোদ-বৃষ্টি যা-ই হোক, ফসলের তেমন ক্ষতি হয় না। বৃষ্টি বেশি হলেও পানি জমে না, তবে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ পেলে সবজির ফলন আরও ভালো হবে।
এ সম্পকে সাবেক মেম্বার মন্টু বলেন,রাস্তার পাশে পতিত জমিতে শাকসবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আশায় তারা সবজি চাষ করেন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান, ঘুচছে বেকারত্ব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমরা কৃষি চাষে আধুনিকায়ন আনার চেষ্টা করছি।’সবজি চাষে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষরা এসে কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন, যাতে তারা একজন সফল সবজি চাষি হতে পারেন।যাতে পতিত জমিতে সবজি চাষ করে গ্রামীণ চাহিদা পূরণ করা যায় এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
তিনি আরো বলেন, এসব শাক-সবজি মহাসড়কের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শাক-সবজি চাষ করে কৃষকরা একদিকে যেমন তাঁদের সংসারের সবজির চাহিদা পূরণ করছেন, অন্যদিকে সবজি বিক্রি করে বাড়তি রোজগারও করছেন। তাঁদের এই সাফল্যে খুশি উপজেলা কৃষি অফিস।
উল্লেখ্য, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় স্থানীয়রা এ সবজি চাষ করে যেমন নিজেরা খেতে পারছেন, তেমনি বাজারে বেচে করতে পারছেন আয়ও। আগামীতে দেশের সবজি চাহিদা মেটাতে এই উদ্যোগ সারাদেশে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানাচ্ছেন কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।তারা বলছে, কৃষকদের তালিকা করে সবজির বীজ প্রদানসহ চাষের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।