রংপুরের বদরগঞ্জে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী প্রতিবেশী জ্যাঠা কর্তৃক ৬ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েছে। উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের খোড়াজান এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। গতকাল (১৯ডিসেম্বর) এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর মা বদরগঞ্জ থানায় মামলা দিয়েছেন। একারণে ভেস্তে গেছে মাতব্বরদের ৭ লাখ টাকার রফাদফা। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ ওই মামলার আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
পারিবারিক ও মামলা সুত্রে জানা যায়, ৭ ডিসেম্বর ওই শিক্ষার্থী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। একারণে তার মা তাকে স্থানীয় এক হোমিও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু তার শারীরীক পরিবর্তনে চিকিৎসকের সন্দেহ হলে তিনি চিকিৎসা না দিয়ে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী মেয়েকে নিয়ে মা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা মেয়েটির শারীরীক পরিবর্তন লক্ষ্য করে তাকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী স্থানীয় একটি বেসরকারি প্যাথলজিতে মেয়েটির আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট হাতে পেয়ে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন মেয়েটি ৬ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা। বিষয়টি জানতে পেরে মেয়েটির মা বাকরূদ্ধ হয়ে পড়েন এবং সাথে থাকা কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। এরপর তিনি মেয়েকে নানাভাবে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন সাত মাস আগে বাড়ির পাশে সুপারি বাগানে খেলার সময় তাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান আব্দুল মান্নানের ছেলে ও প্রতিবেশী জ্যাঠা সাদিকুল ইসলাম। এরপর সাদিকুল তার গলায় ধারালো বঁটি ধরে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর বিষয়টি প্রকাশ না করতে তাকে কঠোরভাবে শাসানো হয়। এছাড়া যখনই সে ডাকবে তখনই সে যেন তার কাছে ছুটে যায় এমনই নির্দেশনা দেয়া হয়। এর অন্যথা হলে তাকে হত্যা করে লাশ পুঁতে রাখারও হুমকি দেয় সাদিকুল। এসময় তার বাড়িতে কেউই ছিলনা। এরপর থেকে সে সুযোগ পেলেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে আসছিল। কিন্তু প্রাণভয়ে মেয়েটি কাউকে কিছু বলতে পারেনি। একারণে সে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে।
ওই স্কুল শিক্ষার্থীর মা আরও বলেন, মেয়ের কাছ থেকে সবকিছু জানার পর সাদিকুলের বাড়িতে যাই এবং তার সাথে কথা বলি। সে সবকিছু অকপটে স্বীকার করলেও বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নানা ধরণের হুমকি দেন। একারণে তিনি সাদিকুলের চাচা আনসার আলীর কাছে যান এবং ঘটনা খুলে বলেন। তিনিও বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে নিষেধ করেন। এর পাশাপাশি কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে মেয়েটির গর্ভের সন্তান নষ্ট করার পরামর্শ দেন। এতে তিনি রাজি না হয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সাথে আলোচনা করেন। এ সুযোগকে কাজে লাগান সাদিকুলের ভায়রা মোরশদে আলী। তিনিও বিষয়টি না বাড়াতে মেয়ের মাকে নানা ধরণের হুমকি দেন। একারণে এলাকার মনসুর আলী ওরফে ভোদাই মেম্বারের বাড়িতে দফায় দফায় বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে মেয়ের মাকে ৭লাখ টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বলা হয়। এনিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হলে স্থানীয় মাতব্বরদের সেই প্রচেষ্টা বিফলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মেয়েটির মা সাদিকুলকে আসামী করে বদরগঞ্জ থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দেন।
এ বিষয়ে বদরগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, মামলা হলেও সাদিকুল গা ঢাকা দেয়ায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাকে গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।