সকালে ছুটিতে বাড়িতে আসবেন তাই রাতেই ব্যাগ গোছানো শেষ করে রেখে ছিলো ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন। পূর্বের সেই প্রস্তুতি অনুযায়ী বাড়িতে ঠিকই আসছেন নয়ন, তবে সাদা কাপড় জড়িয়ে। বুধবার মধ্যরাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন নেভাতে যান নয়ন। সেখানে রাস্তাপারাপারের সময় বেপরোয়া গতির একটি ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে নয়নের জীবনের আলো নিভে যায়।
নিহত ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন (২৪) রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের ছড়ান আটপড়িয়া গ্রামের কৃষক আখতারুজ্জামানের ছেলে। তিনি দুই বছর ধরে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সে কর্মরত ছিলেন।
ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়নের মৃত্যুর খবরে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের মধ্যে নয়ন ছিল ছোট। সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে মা নার্গিস বেগম কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার। সন্তান হারানোর ব্যথায় বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন তিনি। একমাত্র ছেলে সন্তানকে হারিয়ে শোকে কাতর পরিবারটি। নয়নের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে আত্মীয়-স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশীরাও কাঁদছেন। সেই সাথে বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে নয়নের মৃত্যুতে মধ্যবিত্ত পরিবারটির কী হবে, সেই ভাবনাই এখন বেশি ভাবাচ্ছে স্বজনদের।
এদিকে মাত্র ২৩ বছর বয়সেই দায়িত্ব পালনের সময় জীবন উৎসর্গ করা সাহসী যোদ্ধা নয়নের জন্য বাড়ির অদুরে কবর খোড়া হয়েছে, সেই সাথে অন্যান্য প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু ঢাকা থেকে মরদেহ রংপুরে আসলেই দাফন কার্য সম্পন্ন করা হবে। নয়নের মরদেহ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছেন পরিবারের পক্ষ থেকে স্বজনরা। সন্ধ্যার মধ্যে গ্রামের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা তাকে শেষবারের মতো দেখতে অপেক্ষা করছেন।
নিহত নয়নের বাবা আক্তারুজ্জামান দুদু মিয়া জানান, আমার সমস্ত সহায় সম্বল শেষ করে একমাত্র ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করেছি। পরে ফায়ার সার্ভিসে চাকুরী পায় ছেলে আমার। তিনি আরো বলেন, নয়নের অনেক স্বপ্ন ছিলো এই চাকরিকে ঘিরে। চাকরির পাশাপাশি প্রোমোশনের জন্য পড়াশুনাও চালিয়ে গিয়েছিলো। ছড়ান ডিগ্রি কলেজ থেকে এই বছর বিএ ফাইনাল পরিক্ষা দিয়েছে ছেলে। আমার ছেলে সেই পরিক্ষার ফল দেখতে আর পারলো না। সব শেষ হয়ে গেলো। এসময় তিনি ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, আগুন নেভানোর সময় পুরো এলাকাটি সুরক্ষিত রাখা হলে এ ঘটনা ঘটত না। তারা ঘাতক কাভার্ডভ্যান চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সেই সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলার অভিযোগও তুলেছেন তারা।