× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পর্যটকের আকর্ষণ ''পৃথিমপাশা নবাববাড়ি''

জায়েদ আহমেদ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি ।

৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:০৪ পিএম । আপডেটঃ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:০৫ পিএম

ছবিঃসংবাদ সারাবেলা।

১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়। সেই সূত্রে দেশটির সঙ্গে ছিল এ বাড়ির যোগাযোগ। শুধু ইরানের রাজা নন, এ বাড়ির অতিথিশালায় আতিথেয়তা নিয়েছিলেন ত্রিপুরার মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য বাহাদুর। আর ইংরেজ আমলে বহু অফিসার ও ব্যবসায়ী এ বাড়িতে থেকেছিলেন বিভিন্ন কারণে।

এসব কারণেই পৃথিমপাশা জমিদারবাড়ি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়েছে অনেক গালগল্প। তার কিছু সত্য আর কিছু কল্পনার মিশেলে ভরপুর। পৃথিবীতে এখন জমিদার না থাকলেও লিখিত কিংবা মৌখিক ইতিহাসে আছে তাঁদের কথা। আর তাঁদের স্মৃতি পড়ে রয়েছে পুরো দেশের বিভিন্ন জনপদে। তেমনি এক জনপদ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া। সেখানেই এই বিখ্যাত পৃথিমপাশা জমিদারবাড়ি। কয়েক শ বছরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে এ বাড়িটির সঙ্গে। এটি পৃথিমপাশা নবাববাড়ি নামেও পরিচিত। জমিদারি আমলের স্মৃতি আর নানা গালগল্প নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এ ঐতিহাসিক বাড়িটি এখন কুলাউড়ার দর্শনীয় জায়গা। এ পর্যটন মৌসুমে একবার ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।

প্রায় ৩৫ একর জায়গাজুড়ে জমিদার বাড়ী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে সবসময় রাখা হয়। বাড়ির ভেতরে রয়েছে বিশাল বড় দিঘি, কারুকাজ সম্পন্ন আসবাবপত্র, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, বৈঠক খানা ও ইমামবাড়া। জমিদারবাড়ির সদস্যরা হলেন শিয়া মতাবলম্বী। নবাব আলী আমজদ খান ইমামবাড়াটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকে শিয়া মতাবলম্বীরা প্রতি বছর মহররমের দিন শোক মিছিল, কারবালার ইতিহাস বয়ান করা হয়। জমিদারবাড়ির মসজিদে প্রতি শুক্রবার দুটি জুমার নামাজ অনুষ্ঠান হয়। প্রথম জামাতে সিয়া মতাবলম্বীরা নামাজ আদায় করেন দ্বিতীয় জামাতে সুন্নি মতাবলম্বীরা নামাজ পড়েন।

জমিদারের বিশাল বাড়িটি দেখাশোনা করেন নবাব আলী আমজদ খানের উত্তরসূরীরাই। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক রাখা হয়েছে। বাড়ির ভেতর দীঘির একপাশে রয়েছে জমিদারদের কবরস্থান।  

পৃথিমপাশা জমিদারবাড়ি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষনীয় স্থান। এখানে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটক ছুটে আসেন। বিশেষ করে মহররমের ১০ তারিখ যাকে আশুরা বলা এই দিনে হাজার লোকের সমাগম ঘটে।

জমিদারির ইতিহাস:

ইতিহাস থেকে জানা যায়,
১৪৯৯ সালে মোগল সম্রাট আকবরের সময়কালে ইরান থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য ভারতবর্ষে আসেন সাকী সালামত খান। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যেই তাঁর ছেলে ইসমাইল খান লোদী আসেন পৃথিমপাশায়। ইসমাইল খান ছিলেন উড়িষ্যার গভর্ণর। ইসমাইল খানের ছেলে শামসুদ্দিন খান। শামসুদ্দিন খানের ছেলে রবী খান। যার নামে ১৭৫৬ সালে রবিরবাজার নামে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়। রবী খানের ছেলে আলী খান। আলী খানের ছেলে গৌছ আলী খান। তিনি ১৭৯২ সালে ইংরেজ শাসকদের পক্ষে হয়ে নওগা কুকিদের বিদ্রহী দমনে আলী খান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ইংরেজ সরকার আলী খানের ছেলে গৌছ আলী খানকে উপহার হিসেবে ১ হাজার ২০০ হাল বা ১৪ হাজার ৪০০ বিঘা জমি দান করেন। গৌছ আলী খানের ছেলে আলী আহমদ খান সিলেটের তৎকালীন কাজী (বিচারক) ছিলেন। তাঁর সময়ে জমিদারীর রাজস্ব বেড়ে যায় এবং তিনি ব্রিটিশ আনুকুল্যও লাভ করেন। তিনি চাদনীঘাট এবং সুরমা নদীর তীরে সিলেট শহরের গোড়াপত্তন হয়।  

নবাব আলী আহমদ খানের ছেলে নবাব আলী আমজাদ খান তিনি তখনকার সময়ে বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে সবচেয়ে স্বনামধন্য এবং প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন। সিলেটের বিখ্যাত সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাটের সিঁড়ি সমাজসেবায় তার একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত। জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখতে আলী আমজাদ খান মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করছেন। আলী আমজাদ খানের দুই ছেলে একজন আলী হায়দার খান ও অপরজন আলী আজগর খান। আলী আজগর খানের ছেলে আলী ইয়াওয়ার খান।

১৮৭৪ সালে যখন ঘড়ির অবাধ প্রচলন ছিল না, সেসময় সিলেট মহানগরীর প্রবেশদ্বার (উত্তর সুরমা) কীন ব্রিজের ডানপার্শ্বে সুরমা নদীর তীরে এই ঐতিহাসিক ঘড়িঘরটি নির্মাণ করেন জমিদার আলী আহমদ খান, তার ছেলে আলী আমজদের নামকরণে। লোহার খুঁটির উপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির ঘড়িঘরটি তখন থেকেই দেশ বিদেশে আলী আমজদের ঘড়িনামে পরিচিতি লাভ করে।

আলী আমজাদ খানের পুত্র নবাব আলী হায়দার খান ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। পৃথিমপাশা জমিদার পরিবারের সন্তান নবাব আলী সারওয়ার খান, নবাব আলী আব্বাস খান, প্রমুখরাও বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমান সময়ের জমিদারের উত্তরসূরীরা সমাজের উন্নয়নের জন্য সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন।

যেভাবে যাবেন:
ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ট্রেন যোগে কুলাউড়া রেলস্টেশন থেকে সিএনজি অটোরিকশায় সহজে পৃথিমপাশা জমিদার বাড়ী যাওয়া যাবে। এছাড়া বাস করে দেশের যেকোনো স্থান থেকে মৌলভীবাজার শহরে নেমে লোকাল বাস বা সিএনজি অটোরিকশা করে যাওয়া যায়।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.