উৎপাদনের মৌসুমে দেশের অন্যতম ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসির) ১২টি বাগানে টাকার অভাবে শ্রমিক কর্মচারীদের মুজুরি বেতন না দিতে পারায় গত আগস্ট মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১২টি বাগান বন্ধ ছিল।
এর প্রভাব পড়েছে দেশের জাতীয় চা উৎপাদনে। এছাড়া টাকার অভাবে সব বাগানে সময় মত সার দিয়ে পরিচর্যা না করতে পেরে গত বছরের চেয়ে উৎপাদন কমেছে। চা-চাষের জন্য প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টি কিন্তু তুলনামূলক ভাবে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় চা উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেছে।
চা বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, এ বছর দেশের ছোট বড় ১৬৯টি বাগানে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি চা-পাতা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৬ মাসে উৎপাদন হয়েছে ৭ কোটি ৬৬ লাখ কেজি। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়।
কারন শেষের তিন মাসে চা-বাগানে সবুজ চা-পাতা তেমন সংগ্রহ করা যায়না। ২০২৩ সালে দেশের সব বাগান মিলে ১০কোটি ২৯ লাখ কেজি চা-পাতা তৈরি করা হয়েছিল। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ কোটি ১৩ লাখ কেজি চা-পাতা উৎপাদন করার কথা। কিন্তু এটি কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। কারন এই সময় চা-বাগানে তেমন পাতা পাওয়া যায় না।
মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর চা-বাগানের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম ফকির বলেন, এনটিসি ১২ টি বাগানে দীর্ঘদিন বাগান বন্ধ থাকায় লক্ষমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। কারন আগস্ট থেকে নভেম্বর তিন মাস ১৫ হাজার শ্রমিক বাগানে কাজ থেকে বিরত ছিল। এখন উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশ চা বাগান মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ২০২৪ সালে দেশের চা-বাগান গুলোতে অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। ক্রমাগত লোকসানের কারণে অনেক চা-বাগানের কারখানা দিনের পর দিন বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকের মুজুরি দিতে না পারায় এনটিসির ১২টি বাগান তিন মাসের মত বন্ধ ছিল। টাকার অভাবে অনেক বাগান মালিক বাগানে সময় মত প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে পারেনি। এছাড়া ২০২৪ সালে বৃষ্টি হয়েছে তুলনামূলক বেশি। সব মিলিয়ে গেল বছর চা বাগানে আশানুরূপ উৎপাদন হয়নি, সমস্যা লেগেই ছিল। এ বছর চায়ের উৎপাদন কম হওয়ায় চট্টগাম, শ্রীমঙ্গল ৩০ টি নিলাম বাজারে চা সরবরাহ কমেছে।
এ বছর নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ২১০টাকা ৫৬ পয়সা, গত বছর ছিল ১৯২ টাকা। সরবরাহ কমে যাওয়ায় চায়ের দাম এবার কিছুটা বেড়েছে। গত বছর এক কেজি চায়ের উৎপাদনে খরছ ছিল ২২৬ টাকা। এ বছর চা সংশ্লিষ্ট সব উপকরণের দাম বাড়ার কারনে উৎপাদন খরছ আরো বেড়েছ। একদিকে চায়ের উৎপাদন কমেছে অন্যদিকে বেড়েছে খরছ। তাই এ বছর বাগান মালিকদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
চা বেচা-কেনা মধ্যস্থতাকারি ন্যাশনাল ব্লেকার্সের সিনিয়র ম্যানেজার অনজন দেব বর্মণ জানান, নিলামে গত বছরের চেয়ে এ বছর চায়ের সরবরাহ কমেছে। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা সাড়ে ৯ কোটি কেজি চা-পাতা। সে পরিমাণ চা-পাতা বাগানে উৎপাদিত হলে দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। চট্টগাম, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ মিলে দেশে ছোট বড় ১৬৯ চা-বাগান রয়েছে।